নেত্রকোনায় ১২৫ গ্রাম প্লাবিত, দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও বারহাট্টা উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ১২৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৯টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। ২ শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অবশ্য জেলার বড় নদী সোমেশ্বরী ও কংস নদের পানি কিছুটা কম ছিল। তবে ধনু, নেতাই, মহাদেও, মঙ্গলেশ্বরী, মগড়াসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধ থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। শেরপুরের ভোগাই ও কংস নদের পানি জারিয়া এলাকা হয়ে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীতে প্রবাহিত হয়। এতে ৫ উপজেলায় ১২৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় বেশি ক্ষতি হয়েছে দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া, কাকৈইগড়া ও গাঁওকান্দিয়া; কলমাকান্দার লেঙ্গুরা, খারনৈ, কৈলাটি, পোগলা ও বড়খাপন; পূর্বধলার জারিয়া ধলামূলগাঁও; নেত্রকোনা সদরের কালিয়ারাগাবরাগাতি, মৌগাতি, মেদনি; বারহাট্টার বাউসী ও রায়পুর ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুকুরসহ আমন ফসল ডুবে গেছে।
সোমবার সকালে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জারিয়া ইউনিয়নের জামিয়া নাটেরকোনা মাদ্রাসা ও নাটেরকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯টি এবং কুল্লাগড়ার পশ্চিম কাকড়াকান্দা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির আমন ধান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বন্যার পানির কারণে ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, জেলার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। আকস্মিক বন্যার কারণে ৫টি উপজেলায় ১৮ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে দুই শতাধিক পুকুরের মাছ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর বলেন, ৫টি উপজেলায় ২০৩টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার তথ্য পেয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, উব্দাখালীর পানি কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। কংস নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে রোববার রাত ৯টার দিকে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার সকাল ৭টা থেকে কমতে থাকে। এখন এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নদ-নদীর পানি এখন দ্রুত কমে যাবে। এসব পানি খালিয়াজুরির ধনু নদ হয়ে মেঘনায় চলে যাবে।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি আছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা নগদ ৩ লাখ টাকা, ২ হাজার ৫০০ প্যাকেটে শুকনো খাবার ও ৬০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে।