বিএনপি নেতার কাণ্ড
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ছেলেকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম
তালতলী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে (৩০) বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়।
তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা এ নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার।
তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে নির্যাতন শেষে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুতের খুঁটিতে সুমনকে বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে নিন্দা ও শাস্তির দাবি উঠেছে।
ঘটনা ঘটেছে রোববার সন্ধ্যায় তালতলী বাজারের শহীদুল হকের বাসার সামনে।
তবে তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপির দুই কর্মী ফোরকান হোসেন ইমরান ও জহিরুল হক ছোট্টকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। ওই ঘটনার রেশ ধরে মামলার বাদীপক্ষের লোকজন সুমনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধরের কথা তিনি অস্বীকার করেছেন।
সোমবার দুপুরে পুলিশ সুমনকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেছে। ওই দিন আদালতের মাধ্যমে তাকে বরগুনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তালতলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের জের ধরে একটি মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দুলাল হাওলাদার বাদী হয়ে ৪৯ জনের নামে তালতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় সুমন বাবা-মায়ের জন্য তালতলী বাজার থেকে ওষুধ কিনে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হকের বাসায় সামনে তার গাড়ি আসামাত্রই শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামায়। পরে তাকে সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন। প্রায় ২০-২৫ মিনিট তার ওপর নির্যাতন চালান তারা। শহীদুল হক ও তার লোকজনের এমন নির্যাতনের দৃশ্য স্থানীয়রা প্রত্যক্ষ করেন কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন। নির্যাতন শেষে তারা সুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ছেলে যুবলীগ কর্মী জাফরুল হাসান সুমনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে তালতলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক ও তার দুই ছেলেসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি উঠেছে।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে জাফরুল হাসান সুমন বলেন, বাবা-মায়ের জন্য ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদুল হক, তার দুই ছেলে নাঈম ও অন্তুসহ ১০-১২ জন বিএনপি নেতাকর্মী আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে তারা আমার ওপর নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে তারা আমাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।
তালতলী থানার ওসি মো. কালাম খান বলেন, মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে জাফরুল হাসান সুমনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। তবে তাকে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পুলিশ পায়নি। সুমন তদন্তনাধীন একটি মামলার আসামি।
তিনি আরও বলেন, সুমনকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।