Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভবদহের জলাবদ্ধতা সমাধানে পানিসম্পদ উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

ভবদহের জলাবদ্ধতা সমাধানে পানিসম্পদ উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি

যশোরের দুঃখ ভবদহ অঞ্চলের তিন লক্ষাধিক মানুষ এবারো জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে মোবাইল ফোনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহের জলাবদ্ধতা সমাধানে প্রতিশ্রুতি দেন।

গত দুই বছর পানির জলাবদ্ধতা না থাকলেও গেল দেড় মাসের টানা বৃষ্টিতে ফের তলিয়ে গেছে এ অঞ্চল। পানি ঢুকে পড়েছে ঘর-বাড়িতেও। বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকার মানুষ পরিবারের সদস্যরা ও গরু-বাছুর নিয়ে সড়কে থাকেন। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, চার দশকে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি। বরং বেড়েছে দ্বিগুণ।

এমন পরিস্থিতিতে ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে যশোর কালেক্টরেট ভবনের (ডিসি অফিস) সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির ডাকে ব্যানার-ফেস্টুন, লাঙল, মই ও আঁচড়াসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।

এ সময় হাজারখানেক ভবদহবাসী ‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানে দিতে থাকেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে নেতারা বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, অন্যদিকে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভবদহ স্লুইস গেট থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করেছে। ওই এলাকার কতিপয় ঘের মালিক, ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তারা একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে লুটপাটের উৎসব বসিয়েছে। তাদের কারণে আজ সেখানকার মানুষ জলমগ্ন। এই মুহূর্তে পানি সরানোর কাজে পাম্প চালু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংগঠনটির উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পাম্প দিয়ে পানি সরানো যাবে না। এই সমস্যা সমাধানে এই মুহূর্তে বিল কপালিয়ায় আরএম চালুর কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে পাউবো প্রায় ৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে। সেখানে প্রায় ১৮ কোটি টাকার এক্সকেভেটরের কাজ বাদে অন্য টাকা লুটপাট হয়ে যাবে।

মানববন্ধনে কৃষক নেতারা বলেন, পাউবো বলেছিল- ডিসেম্বরে আপনারা রোপা চাষ করতে পারবেন কিন্তু এখনো ভবদহ এলাকার লাখ লাখ একর জমি পানির নিচে, হাজার হাজার ঘরবাড়ি জলমগ্ন, ৪০-৫০টি স্কুল-কলেজে পানি।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপাঙ্কর দাস রতন বলেন, আদিকাল থেকে দেখে আসছি বাড়ির উঠানে দাদা দাদির সঙ্গে বাচ্চারা খেলা করতে। এখন ওই অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে মাজা সমান জল। কোনো বিয়ে ধর্মীয় উৎসব করতে পারছে না। এমনকি কেউ মারা গেলে দাহ বা কবর দিতেও পারছে না। বছরের পর বছর রাজনীতিবীদরা প্রকল্প এনে লুটপাট করেছে; কার্যত কোনো সমস্যা সমাধান হয়নি। পাম্প দিয়ে পানি সরানো যাবে না। এ সমস্যা সমাধানে এই মুহূর্তে বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু দাবি জানান।

এদিকে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে নেতারা তাদের দাবি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে দেখা করতে গেলে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন না। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিসির পদত্যাগ চেয়ে নানা স্লোগান শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।

কর্মসূচির প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। এ সময় তিনি তোপের মুখে পড়েন। উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের ডিসির উপস্থিতিতে ডিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এ সময় তিনি উত্তেজিত আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কার্যত কোনো সুফল মেলেনি। সমাধানের নামে ফ্যাসিবাদী সরকারগুলো লুটপাট করেছে। ভবিষ্যৎ ভবদহবাসীর সমস্যা সমাধানে যে প্রকল্প নিবে; সেটা জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে ভুক্তভোগীদের মতামত নেওয়া হবে। তিনি সমস্যাটির সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে মোবাইল ফোনে কথা বলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য বলেন, আমি পূর্বে ভবদহ এলাকা ঘুরে এসেছি। তাদের দুঃখ সরেজমিন দেখে এসেছি। বিগত সরকারগুলো এতদিন সমস্যার আশপাশ দিয়ে ঘুরেছে। এখন আর সেই পথে হাঁটা হবে না। আমিও বিগত সময়ে ভবদহবাসীর সঙ্গে আন্দোলন করেছি। এই সমস্যা চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে তুলে ধরব। আপনারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে তাদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এই এলাকার মানুষ জলে ডুবে মরবে আর গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী মানুষ লুটেপুটে খাবে, এমন পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জলমগ্ন ভবদহবাসীর পক্ষে ফলাফল না আসবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম