ফরিদগঞ্জের তিন যুবদল নেতা হত্যার বিচার হয়নি একযুগেও
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার তিন যুবদল নেতা হত্যার বিচার হয়নি একযুগেও। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে ডাকা মিছিল সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘষের্র সময় গুলিতে নিহতরা হলেন জাহাঙ্গীর বেপারী, আরিফ হোসেন ও বাবুল ভূঁইয়া।
জানা গেছে, নিহত জাহাঙ্গীর বেপারী উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর তিনকড়ি বেপারী বাড়ির আ. মতিন বেপারী ও তফুরেরনেছা দম্পতির ছোট ছেলে। রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল আলিম ও হাজেরা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও সফুরা বেগমের ছেলে বাবুল ভূঁইয়া।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সময়ে মামলা করা হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাল্টা মামলার কারণে তাদের মামলাগুলোর অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। একযুগ মুখে বুঝে সব সহ্য করলেও স্বৈরাচারের পতনের পর নতুন করে বিচারের আশা করছেন ওই তিন পরিবারের স্বজনরা। হত্যার বিচার না পাওয়ার যন্ত্রণাকে স্বজনদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
সরেজমিন নিহত তিন যুবদল কর্মীর বাড়ি গিয়ে তাদের মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে কথা বলে দুঃসহ জীবনের স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়ানো এবং প্রত্যাশার কথা জানা গেছে।
রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের মুন্সি বাড়ির মরহুম আ. আলিমের তিন সন্তানের মধ্যে সে সবার ছোট, পেশায় টাইলস মিস্ত্রী ছিলেন আরিফ। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বাড়ি থেকে বের হয়ে বিএনপির মিছিলে যোগ দেন। কিন্তু বাড়ি ফেরেন লাশ হয়ে।
মা হাজেরা বেগম জানান, ছেলেকে হারানোর পর থেকে তার সংসারের সুখ চলে গেছে। তার স্বামীও মারা গেছেন। মেজ ছেলে দেলোয়ার হোসেন ব্রেন স্ট্রোক করেছে। আরিফের বিধবা স্ত্রী আদরের নাতনিকে নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছে।
ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে তার ভাই আরিফের হত্যার বিচার পাননি। মামলা করা হলেও উল্টো মামলা দিয়ে আমাদের মামলাকেই শেষ করে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের পতনের পর মামলাটি পুনঃতদন্তের আবেদনের পর খারিজ করে দেয় আদালত। তবে প্রত্যাশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সঠিক নিদের্শনায় মামলাটি পুনরায় তদন্ত হবে এবং আমরা ন্যায়বিচার পাবো।
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ বদরপুর গ্রামের আনিছ ভুঁইয়া বাড়ির আ. রহিমের ৬ সন্তানের মধ্যে বড় বাবুল ভুঁইয়া। বিএনপির ডাকা মিছিলে অংশ নিতে ফরিদগঞ্জ সদরে আসে কিন্তু ফেরে লাশ হয়ে।
নিহত বাবুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালাতেন তার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিন সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। আওয়ামী লীগের লোকজন টাকার লোভ দেখালেও তাতে সাড়া দেইনি। একযুগ স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষায় আছি।
পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর গ্রামের তিনকড়ি বাড়ির মৃত আব্দুল মতিনের ৯ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট জাহাঙ্গীর বেপারীও ওইদিন আরও নেতাকর্মীর মতই মিছিলে এসেছিলেন। কিন্তু সেও লাশ হয়ে ফিরে।
বড় ভাই সেলিম বেপারী জানান, জাহাঙ্গীরের মৃত্যুতে সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায় তার সংসারে। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী চলে যায়। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু ছোট ভাইয়ের হারানোর ব্যথা ভুলতে পারছি না। ফ্যাসিস্টরা এতদিন আমাদের কথা বলতে না দিলেও এখন বিশ্বাস করি খুনীদের বিচার হবেই।