Logo
Logo
×

সারাদেশ

সপরিবারে ব্যবসায়ীর দেশত্যাগ, ব্যাংকের ১০৯ কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত

Icon

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পিএম

সপরিবারে ব্যবসায়ীর দেশত্যাগ, ব্যাংকের ১০৯ কোটি টাকা আদায় অনিশ্চিত

একটি বেসরকারি ব্যাংকের বগুড়া শাখার ঋণগ্রহীতা সমীর প্রসাদ দত্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সপরিবারে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। এদিকে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান ভুঁইয়া আত্মগোপন করায় সুদ আসলে ঋণের ১০৯ কোটির অধিক টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

দুদকের পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, তাদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে কী পরিমাণ সম্পত্তি মর্টগেজ (বন্ধকি ঋণ) রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। ওই সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ আদায় করা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী সমীর প্রসাদ দত্ত বগুড়া শহরের ঝাউতলা, রাজাবাজার এলাকার মেসার্স দত্ত ট্রেডার্সের মালিক মৃত শ্যামা প্রসাদ দত্তের ছেলে। সমীর প্রসাদ দত্ত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখায় টেকওভার ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওইদিনই কল রিপোর্ট ও লোন প্রোপোজাল প্রস্তুত করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মাত্র সাতদিনের মধ্যে কোন রেকর্ডপত্র যাচাই না করে নয় কোটি ৫২ লাখ টাকার সমপরিমাণ সহায়ক জামানত গ্রহণ করে ৪৯ কোটি টাকা টেকওভার ঋণ প্রদানের অনুমোদন মঞ্জুর করে সরবরাহ করেন।

পরবর্তীতে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ প্রদানের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ১৩ কোটি টাকার সমপরিমাণ সহায়ক জামানত রেখে পুনরায় ৪৯ কোটি টাকা থেকে ৫৮ কোটি টাকা ঋণসীমা বাড়িয়ে সরবরাহ করেন। এর ছয় মাস অতিবাহিত না হতেই ঋণগ্রহীতা ঋণ প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ইউসিবিএল থেকে কয়েকবার ঋণের সুদ মওকুফের অবৈধ সুবিধা প্রদান করা হয়। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান ভুঁইয়া ও ব্যবসায়ী সমীর প্রসাদ দত্ত পরস্পর যোগসাজশে সুদ আসলে সর্বমোট ১০৯ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৪০৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। এতে তারা দুজন দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।

এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্বাস ভঙ্গ করে ব্যাংকের উল্লিখিত অংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার উত্তরা মডেল টাউনের বাড়ি নং-২৪/এ, রোড নং-০২, সেক্টর নং-০৩ এর মৃত মেছের আহমেদ ভুঁইয়ার ছেলে ইউসিবিএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান ভুঁইয়া (৭৪) ও বগুড়া শহরের ঝাউতলা রাজাবাজারের মেসার্স দত্ত ট্রেডার্সের মালিক ঋণগ্রহীতা সমীর প্রসাদ দত্তের (৬১) বিরুদ্ধে দণ্ডবিধিসহ দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়।

দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গত ১৩ মে বগুড়া কার্যালয়ে এ মামলা করেন। ইতোমধ্যে মামলাটি বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

অন্যদিকে বগুড়া শহরের ঝাউতলা, রাজাবাজার এলাকায় মেসার্স দত্ত ট্রেডার্স ও আশপাশে খোঁজ করে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সমীর প্রসাদ দত্ত বেশ কয়েক বছর আগে সপরিবারে ভারত চলে গেছেন। আরও কয়েকটি ব্যাংকে তার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়ার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সমীর প্রসাদ দত্ত বর্তমানে পরিবার নিয়ে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। আর ইউসিবিএলের ১০৯ কোটির অধিক টাকা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা কম।

দুদক বগুড়ার পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, মর্টগেজ রাখা সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা আদায় করা হবে। তবে তদন্ত শেষ হলেই জানা যাবে, সমীর প্রসাদ দত্ত কী পরিমাণ ও কত টাকা মূল্যের সম্পত্তি মর্টগেজ রেখেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম