
প্রিন্ট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
১৮ মাস দুঃস্থদের চাল তুলেছেন চেয়ারম্যান, জানে না ভুক্তভোগীরা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম

আরও পড়ুন
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে দুঃস্থদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাননি অনেক উপকারভোগী। এ ইউনিয়নের ১৯ জন উপকারভোগীর নামে বরাদ্দের ২৪ মাসের মধ্যে ১৮ মাস চাল তুলে নিয়েছেন চেয়ারম্যান নিজেই।
গত জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল বিতরণ করতে গিয়ে এসব উপকারভোগী ইউনিয়ন পরিষদে চাল নিতে না আসায় এমন রহস্য বের হয়ে আসে। ইউপি সদস্যরা বলছেন, শুধু ১৯ জনই না, তালিকা ধরে খোঁজ নিলে আরও অনেকেরই নাম বের হয়ে আসবে।
গত বৃস্পতিবার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলার বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হন উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী। মামলার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম।
ভিজিডি’র কার্ডধারী হতদরিদ্রদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বরাদ্দের চাল আসে ইউনিয়ন পরিষদে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে কার্ডধারী ৪২৯ জন উপকারভোগীকে প্রতিমাসের ৩০ কেজি করে চাল নিতে ইউনিয়ন কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। এদের মধ্যে ১৯ জনের চাল গত এক মাসে কেউ নিতে আসেননি। গত দুই মাসের ১৯ জনের মোট ৩৮ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে মজুত থাকতে দেখা গেছে।
ভূক্তভোগী, ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে বিতরণ না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে ১৯ জন দুঃস্থর মোট ৩৮ বস্তা চাল মজুত রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের পক্ষে তালিকা ধরে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলা হয়। ১৩ জন কার্ডধারীর সন্ধান পেয়েছেন তারা। ৬ জনের সন্ধান এখনও পাননি। তবে যাদের সন্ধান পেয়েছেন তারা বরাদ্দের বিষয়ে গত ১৮ মাস ধরে কিছুই জানেন না। এমনকি তারা কখনও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০ কেজি তো দুরের কথা, এক ছটাক চালও তুলেননি।
শুধু ১৯ জনই নয়, ভালভাবে খোঁজ নিলে ওই তালিকা থেকে কমপক্ষে আরও ৫০ জনেরও বেশি নাম বের হয়ে আসবে বলে জানান বর্তমান ইউপি সদস্যরা। গত ১৮ মাসে যে তথ্য জানা যায়নি, তা এক মাসেই বের হয়ে আসে।
তালিকায় নাম আছে, অথচ ১৮ মাস ধরে চাল পাননি ভুক্তভোগী দূর্গাপুর-বহুতী গ্রামের বাসিন্দা মোছা. মাহমুদা। তিনি বলেন, আমিতো চালের বিষয়ে কিছুই জানি না। কয়েকদিন আগে লোকজন এসে বলছে, তোমার চাল গুদামে আছে, তুমি কেন নিয়ে আসোনি।
চাল পাননি মান্দাই গ্রামের মোছা. দেলোয়ারা। তিনি বলেন, চাল বরাদ্দ হয়েছে আমাদের মত গরিবের নামে, আর সেই চাল গত ১৮ মাস ধরে বিক্রি করে খাচ্ছেন চেয়ারম্যান নিজেই।
উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, মামলার পর চেয়ারম্যান পালিয়ে না থাকলে হয়তো এসব কিছুই জানা যেত না।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মাহফুজা খাতুন বলেন, নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তালিকা অনুযায়ী চাল নিতে না আসা কার্ডধারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশকয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা গত ১৮ মাসের চাল চায়। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।