গোবিন্দগঞ্জে সাবেক এমপিসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদসহ ৪৯ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী মো. মামুন খান (২৭)। তিনি গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বুজরুক বোয়ালিয়া (হীরকপাড়া) গ্রামের মো. আব্দুল খালেকের ছেলে।
গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর রহমান সরকারকে মামলাটি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন-গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ (৬৮), উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল (৪০), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান আতাউর রহমান বাবলু (৬২), সাবেক মেয়র মুকিতুর রহমান রাফি (৪৫), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মিয়া আসাদুজ্জামান হিরু (৪৫), উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ফরহাদ আকন্দ (৩৪), পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহিন আকন্দ (৫০), কামারদহ ইউপি চেয়ারম্যান তৌকির হাসান রচি (৩৭), ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া (৪০), উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন-আহবায়ক সাদ্দাম হোসেন (৩২), যুগ্ন-আহবায়ক বাবুল ইসলাম (২৯), পৌর যুবলীগের যুগ্ন-আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম মাবিয়ার (৩৪), জাহিদ ইসলাম (৩৫), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল শেখ সুমন (৩৪), পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ন-আহবায়ক রেজা (৩৩), রাফসান জানি স্বর্নাভ (৩৩), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মাজেদুল ইসলাম মাহিন (২২), ওয়ালিদ হাসান (২৭), উপজেলা শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ (৩২), সাগর ইসলাম (২৯), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মুন্না খন্দকার (২৯), জীবন মন্ডল (৪২), তালুককানুপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিখন সরকার (২৮), নাকাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাওন আল শাদ (২৬), রাখালবুরুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফাইয়াজ আনাম শাফিন (২৬), পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মিজানুর রহমান (৩২), আতিকুর রহমান (৩৪), রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৬), সালমান (২৮), উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য রওশন আলী সনি (৩০), কমেট (৪৫), রুয়েল মন্ডল (৩৬), দিলীপ মন্ডল (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা নুর আলম নুরু (২৮), পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মুন্নু রহমান মুন্না (৩২), কাটাবাড়ি ইউপি ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মালেক দেওয়ান (২২), চাঁদ মিয়া (৪০), সামিউল আলিম (৩২), সাবেক মেয়রের পিএস পাপ্পু আকন্দ (২৭), রাকিবুল ইসলাম পলাশ (৩৫), রাখালবুরুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক খালেক মাহমুদ সুজন (২৫), সজল মহন্ত (৩০), রাহেল (২৩), রঞ্জু মিয়া (৪৫), খালেক (২৬), শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মাহমুদ হাসান আপেল (২৮), শাখাহার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রনি (২৪) ও ইউনুস আলী (৪২), গাজীয়ার রহমান (৩৫)।
এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ৪৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশের মতো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত ১৭ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার সাফিয়া আছাব বিপিএড কলেজ মাঠ থেকে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাকে ছাত্র জনতা একটি প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হয়। শহরের ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে রাজমতি সুপার মার্কেটের সামনে পরিকল্পিতভাবে উল্লেখিত এজাহার নামীয় আসামিরাসহ ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাত আসামি লাঠি, লোহার রড, দেশীয় পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, বার্মিজ চাকু, হকিস্টিক, ইট ও পাথরের টুকরা ভর্তি চটের ব্যাগ নিয়ে অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিরা আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওপর হামলা করে। ৪০/৪২ জন আন্দোলনকারীকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়। আসামিদের হামলায় রাব্বী মিয়া আকাশ, জারিফ সরকার তাহসিন, শ্রাবণ সরকার, তানভীর সরকার বাঁধনসহ অসংখ্য আন্দোলনকারীরা আহত হয়। এ সময় তারা আন্দোলনরত ছাত্র জনতার কাছে থাকা ৬টি স্মার্ট ফোন ও ৩টি বাটন ফোন ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মরধরের পরে আন্দোলনকারীদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কুঠিবাড়ি উপজেলা চত্ত্বরে চলে যায়। পরে আহতরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.ফ.ম. আছাদুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছে। মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামিরা সরকার পতনের পর থেকে এখনও কেউই এলাকায় নেই। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।