গাইনি ডাক্তার না হয়েও সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, ৫ লাখ টাকায় রফা
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
কুমিল্লার চান্দিনায় গাইনি ডাক্তার না হয়েও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়মিত সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের কাজ করে যাচ্ছেন মো. সারোয়ার জাহান নামে এক চিকিৎসক। তিনি চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর বাজারে একটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সেবাসহ নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারি করে আসছেন ওই চিকিৎসক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাবেয়া আক্তার নামে এক প্রসূতি নারীর সিজার করার ৩০ মিনিট পর ওই প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। মৃত রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই আত্মগোপন করেন ওই চিকিৎসক। ঘটনাটি জানাজানি হলে মুহূর্তের মধ্যেই হাসপাতাল এলাকাজুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতার ভিড় জমে। পরে স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাত্র পাঁচ লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।
মৃত প্রসূতি রাবেয়া আক্তার (৩৪) চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আশিকুর রহমান আশুর স্ত্রী। এটা তার তৃতীয় সন্তান প্রসব। ১৫ বছর বয়সি বড় কন্যা সন্তান মাকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। মৃতের স্বামী পাঁচ লাখ টাকায় স্ত্রী হত্যার বিচার না চাইলেও সন্তানসহ স্বজনরা বলছেন, টাকা নয়, কসাই ডাক্তারের বিচার চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোল্লাই নবাবপুর দক্ষিণ বাজারের চারতলা ভবনের ওই হাসপাতালটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও রয়েছে ৪০টি শয্যা। এর মধ্যে ১২টি কেবিন। পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৫জন ও স্থানীয় একজন পরিচালকের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে হাসপাতালটি। চিকিৎসার মান ও পরিবেশ নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
রাবেয়া আক্তারের স্বামী আশিকুর রহমান আশু জানান, আমরা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ওই হাসপাতালে আনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমার স্ত্রীর সিজার করেন ডা. সারোয়ার জাহান। কিছুক্ষণ পর আমাকে জানান, আমার স্ত্রীর আরও ওষুধ লাগবে, রক্ত লাগবে। পাঁচ মিনিট পর বলেন, তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে। আমার স্ত্রীর কী সমস্যা হয়েছে জানতে আমরা ওটি রুমে প্রবেশ করতে গেলে তারা আমাদের কাউকে ওটি রুমে প্রবেশ করেতে দেয়নি। সন্ধ্যা ৭টার পর আমরা জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি আমার স্ত্রীর মুখ ঢেকে রেখেছে তারা। এ সময় ডাক্তারও ছিল না। পরে জানতে পারি ওই ডাক্তার নাকি গাইনি ডাক্তার না। আবার মানুষ ভুয়া ডাক্তার বলেও আমাকে জানায়।
বুধবার দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে ৬ জন পরিচালকসহ ডাক্তার সারোয়ার জাহানকেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর ডা. মো. সারোয়ার জাহান আত্মগোপন করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ৬ জন পরিচালকেরও।
নবাবপুর টাওয়ার হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. সোহাগ জানান, প্রসূতি মারা গেলেও বাচ্চা সুস্থ আছে। বাচ্চাটি পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ঘটনার পর আমরা মৃতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। ডাক্তার প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, ঘটনাটি শুনেছি। তবে মৃত প্রসূতির পরিবারের কেউ কোনো অভিযোগ করেনি আমাদের কাছে। আর ওই হাসপাতালের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
চান্দিনা থানার ওসি মো. নাজমূল হুদা জানান, এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।