Logo
Logo
×

সারাদেশ

শিবালয়ে গায়েবি প্রকল্পে অর্ধ কোটি টাকা গায়েব

Icon

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম

শিবালয়ে গায়েবি প্রকল্পে অর্ধ কোটি টাকা গায়েব

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) আওতায় উপজেলা পরিষদে ডজন খানেক গায়েবি প্রকল্প বানিয়ে নামমাত্র কাজ করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা গায়ের করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে বেশীর ভাগ ছিটে ফোঁটা,আবার কোনোটির কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে একই প্রকল্প দেখিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বিশেষ বরাদ্ধের একটাকা খরচ না করে পুরো টাকা গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন ও ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এর আওতায় তিনি শিবালয় উপজেলা পরিষদের একটি প্রকল্পে পৃথক ৬টি আইটেমে ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজ পান। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন তার কাছ থেকে জোড়পূর্বক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা রকিবুল হাসানের মাধ্যমে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে সাড়ে এগারো লাখ টাকা নিয়ে নেয়।  

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছৈনুদ্দিন এন্টারপ্রাইজ মালিক মোহাম্মদ আতোয়ার হোসেন যুগান্তরকে সাফ জানান, তার প্রতিষ্ঠানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান ৫% কম দরে কাজ পাওয়ার পর উপজেলা প্রকৌশলী তাকে জানান যেসব কাজের জন্য আপনি মনোনীতি হয়েছেন সেসব কাজ তিনি আগে থেকে করিয়ে রেখেছেন। আপনাকে কোন কাজ করতে হবেনা। এটাই নাকি এডিবির কাজের ধরন। বরাদ্ধের টাকা উপজেলা প্রকৌশলীকে না দিলে তার লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্তসহ জামানতের টাকা না দেওয়ার হুমকি দেন।

সূত্রমতে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের পুকুরের ঘাটলা সংস্কার বাবদ ৫ লাখ টাকার যে প্রকল্প দেখানো হয়েছে তাতে ঠিকাদার ঘাটলার দু পাশে দুটি এসএস রেলিং স্থাপন ছাড়া আর কিছুই করেননি। 

এছাড়া উপজেলা পরিষদের পুকুর পাড়ের রাস্তা সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকার কাজে এক টাকারও কাজ না করে বিল তুলে নেয়া হয়। একইভাবে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন হতে ডরমেটরি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ পৃথক ৫ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের মেইন গেইট হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবন পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৫ লাখ টাকার এক টাকারও কোন কাজ করা হয়নি।

এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের আঙ্গিনার পার্কিং টাইলস সংস্কার স্থাপনের ৫ লাখ টাকার পুরোটাই গায়েব করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে ডাস্টবিন সংস্কার নামে ৫ লাখ টাকার একটি গায়েবি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ড্রেইন সংস্কার বাবদ ৫ লাখ টাকার প্রকল্প নেয়া হলেও সেখানে ছিটেফুটো কিছু কাজ করা হয়েছে। আর উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কারে যে ৫ লাখ টাকার প্রকল্প দেখানো হয়েছে তার এক টাকারও কাজ করা হয়নি বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ আতোয়ার হোসেন নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেছেন, তার সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী মোবারক হোসেন যে কাজটি করেছেন সেটি রীতিমতো ডাকাতির মতো ঘটনা। তিনি তার শাস্তি দাবি করেন। 

ঠিকাদার জানান, সাড়ে ২৮ লাখ টাকার কাজের সাড়ে ১১ লাখ টাকা উপজেলা প্রকৌশলীকে, তিন লাখ টাকা উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান খান জানুকে তিন লাখ, ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসলাম মোল্লাকে আরো এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে।  সব মিলিয়ে তিনি লাভ পেয়েছেন মাত্র ৭০ হাজার টাকা।  এখন জামানতের টাকা ফেরত নিয়ে সংশয়ে আছেন।

এছাড়া সূত্রমতে, উপজেলা পরিষদের বাসা সংস্কারের নামে পৃথক একটি প্রকল্প বাবদ ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও ৫/৬ লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। জেনে তদন্ত করে দেখবেন। তবে এডিবির বিশেষ বরাদ্ধের টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়েছে তবে কোন কাজ করা হয়নি বলে জানান। তার হয়ে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা রকিবুল হাসান ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম যুগান্তরকে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি  বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। 

  

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম