দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি আসা হলো না সৌরভের
মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পিএম
ছুটি পাচ্ছি। দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি আসছি মা। মোবাইল ফোনে মা-বাবাকে এমন করে কথাগুলো বলেছিলেন জাহাজের ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা। ছেলে আসছে। মায়ের মনে খুশির জোয়ার বইছে। বাবার চোখে-মুখে আনন্দ। পূজায় বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।
কিন্তু সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল সৌরভের বাবা ও মায়ের। তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে অপরিশোধিত তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণে প্রাণ গেল তার। ছেলে বাড়ি আসছে, তবে লাশ হয়ে।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলা কবিরপুর গ্রামের মানিক সাহার ছেলে সৌরভ কুমার সাহা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় জাহাজে লাগা আগুনে প্রাণ গেছে তার। ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে নোঙ্গর করা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে অপরিশোধিত তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনজনের মৃত্যু হয়। ইতোমধ্যে যে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে সৌরভ রয়েছেন বলে পারিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান সৌরভ। বাবা মানিক সাহা ছোট্ট একটা মুদি দোকানের মালিক। দুই ছেলের মধ্যে বড় সৌরভ।
মানিক সাহা বলেন, সৌরভ বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পাশ করে আগস্টে মাসে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির বয়স মাত্র দুই মাস। উপজেলা শহরে সামান্য মুদিদোকানি মানিক সাহা। স্ত্রী দুই ছেলে মা বাবার সংসার, অভাব অনটনে চলে। সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে ছিলেন তিনি। ছেলে আমার মানুষ হলো; কিন্তু হৃদয় ছিঁড়ে বেরিয়ে গেলো আমার সৌরভ। স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিল আগুনে।
মায়ের মুখে ভাষা নেই। বোবা হয়ে গেছেন তিনি। চোখের জল শুকিয়ে গেছে তার। নীরব নিথর ঘরে বসে আছেন মা। সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করছেন না স্বজনরা। সন্তান হারানো মায়ের মন শান্ত হবে কি? ফ্যাল ফ্যাল করে পথের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজছেন তিনি। নীরব নিথর হয়ে পড়েছে বাড়ির ভিটে। কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে নিম্নবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন।
মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সোমবার বৃদ্ধ দাদু শচীন সাহা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সে (সৌরভ) বলেছিল পূজার ছুটিতে বাড়িতে আসবে। আসা আর হলো না তার। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।
নিকট প্রতিবেশী নিপুণ বিশ্বাস বলেন, সৌরভদের পরিবার নিম্নবিত্ত। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিল। তার বাবা খুব কষ্ট করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছিলেন।