রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে সহিংসতা, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে তদন্ত কমিটি
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সকালে রাঙামাটি শহরের বনরুপা ও কালীন্দিপুর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা ও বাড়িঘর পরিদর্শন এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে তারা কথা বলেন।
রোববার খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালা উপজেলা সদরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সাত সদস্যের এ তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরীকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- তিন পার্বত্য জেলার তিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রত্যেক জেলা থেকে একজন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এ কমিটিকে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে মামুন নামে এক যুবক মারা যান। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি বাঙালি সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’। মিছিলটিকে ঘিরেই এদিন রাঙামাটির সহিংসতা ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় অনিক চাকমা নামে এক কলেজছাত্র নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছিলেন। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের নিরূপণ করা ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির পাহাড়ি বাঙালি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনায় মোট ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। এতে সরকারি অফিস, ব্যাংকসহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটেছে।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ভবন ও সেখানে রাখা নয়টি গাড়ি, কালীন্দিপুরে মহিলা বিষয়ক অধিপ্তর অফিস, বনরূপাবাজারে একটি ও কালিন্দীপুরে দুইটি মাইক্রোবাস, ১০টি মোটরসাইকেল, নয়টি গাড়ি, ছয়টি সিএনজি অটোরিকশা, ছয়টি ট্রাক, তিনটি বাস, দুইটি টু স্ট্রোক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে ৮টি ব্যাংকে।
এ ছাড়া ১৮টি বাড়ি, ৮৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ৮৫টি ভাসমান দোকান, ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একটি আসবাবপত্রের দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একটি মসজিদ ও একটি বৌদ্ধবিহারে ভাংচুর হয়েছে। এছাড়া একটি ট্রাফিক বক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
ঘটনার তদন্তে সোমবার সকালে রাঙামাটি শহরের ক্ষতিগ্রস্ত মৈত্রী বিহার, বনরুপা মসজিদ, বনরুপা কাটাপাহাড়, কাঁচাবাজার এবং শান্তিময় চাকমা টাওয়ারসংলগ্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, বাড়িঘর, স্থাপনা, ব্যাংক, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবন, কালীন্দিপুরে অনিক চাকমার নিহতের ঘটনাস্থলসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এ সময় রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির সদস্য জোবাইদা আক্তার, অতিরিক্ত পুলশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজু, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী বলেন, ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনার ব্যাপারে গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওচিত্র এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর তথ্য নিয়েও বিশ্লেষণ করা হবে।
যারা আহত বা নিহত হয়েছেন সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। তদন্ত কমিটি সংঘটিত সহিংসতা ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করাসহ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার যথাযথ সুপারিশসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবে।