Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিনা অপরাধে সৌদিতে আটক ভৈরবের ৩৯ জন

Icon

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

বিনা অপরাধে সৌদিতে আটক ভৈরবের ৩৯ জন

বিনা অপরাধে সৌদি আরবের রিয়াদে বিভিন্ন থানায় আটক ভৈরবের প্রবাসী ৩৯ জনের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। সৌদি সরকারের পুলিশ তদন্ত করার অজুহাতে তাদের ১৪ মাস যাবত রিয়াদ শহরের বিভিন্ন থানা হাজতে আটক করে রেখেছে। রিয়াদের থানাহাজতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।

সোমবার দুপুর ১২টায় ভৈরবের লুন্দিয়া গ্রামের শীতলপাটি সেতুর ওপর তাদের মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন করেন ৩৯ জনের পরিবারের সদস্য। এ সময় আটককৃতদের পরিবারের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরাও উপস্থিত ছিলেন।

তারা আটককৃতদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরিবারদের সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের ইশারা ডিরেকশন নামক স্থানে ভৈরবের লুন্দিয়া গ্রামের প্রবাসী দুটি পক্ষ তাদের পারিবারিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঝগড়া সংঘর্ষে লিপ্ত হন। আটককৃতরা এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন না বলে তাদের পরিবারের দাবি। ঘটনার দিন তারা রিয়াদ শহরের কর্মস্থলে কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে জানতে পারেন তাদের এলাকার কতিপয় প্রবাসী পারিবারিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ করার পর তারা পালিয়ে গেছেন। এতে এদিন কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

ঘটনার খবর পেয়ে সৌদি আরবের সিআইডি পুলিশ ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাত ১০টায় সেই এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাসা থেকে ৩৯ জনকে আটক করে রিয়াদের বিভিন্ন থানায় নিয়ে যায়। সেই সময় আটকের পর থেকে ১৪ মাস যাবত এখনো তারা থানায় আটক আছেন। সৌদি সিআইডি পুলিশ বলছে ঘটনার তদন্ত চলছে।

তবে ৩৯ জনের পরিবারের দাবি, আটককৃতরা বাড়িতে স্বজনদের বলেছে তারা সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত ছিল না। যারা সংঘর্ষে জড়িত তারা পালিয়েছে। ১৪ মাস যাবত তারা রিয়াদের থানায় আটক থাকায় সেখানে কাজকর্ম করতে পারছেন না বা দেশেও আসতে পারছেন না। এদিকে ৩৯ জনের পরিবার তাদের স্বজনদের আয়ের টাকা না পাঠাতে পারায় পরিবারগুলো অর্থকষ্টে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। অপরদিকে দেশে তারা চিন্তিত হয়ে আছে, বিনা অপরাধে তাদের বিচারে সাজাও হতে পারে- এমনটা শঙ্কায় রয়েছে। তারা আমাদের সরকারের মাধ্যমে সবাইকে মুক্ত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনায় ভৈরবের যারা সৌদি আরবের রিয়াদের থানায় ১৪ মাস যাবত আটক আছেন তারা হলেন- শ্রীনগর গ্রামের কামরুল হাসান, একই গ্রামের শহীদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম, শিমুলকান্দি গ্রামের মো. ইমান, ছোট রাজাকাটা গ্রামের কামাল মিয়া, একই গ্রামের মাছুম মিয়া, চাঁনপুর গ্রামের লতিব মিয়া, তৌফিকুর রহমান, ছাগাইয়া গ্রামের রিজাউল ইসলাম, একই গ্রামের খায়রুল মিয়া, সোহেল রানা, মামুন মিয়া, ভবানীপুর গ্রামের মহিবুল্লাহ, সুলাইমানপুর গ্রামের আরমান মিয়া, চন্ডিবের গ্রামের পারভেজ আহমেদ, লক্ষীপুর গ্রামের শ্রবাণ আহমেদ, লুন্দিয়া গ্রামের কাইয়ূম, একই গ্রামের মো. হাসান, আবুল কালাম মোল্লা, সাগর মিয়া, ফারুক মিয়া, নরসিংদীর বেলাব থানার সৌরভ মিয়া, লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বাউরখাড়া গ্রামের জাকির হোসেন, ভৈরবের গোছামারা গ্রামের শান্ত।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের বাড়ির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে দুপক্ষ ঝগড়া সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন ১৪ মাস আগে। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সৌদি পুলিশ আটক করতে না পেরে আমার ভাই শরীফুল ইসলামসহ ৩৯ জনকে আটক করে রাখে। আমরা সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ এ দেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ঘটনাটি অবগত করেছি; কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমরা এখন চিন্তিত।

আরেক ভুক্তভোগী বেলায়েত হোসেন বলেন, আমার ভাই কামরুল হাসান বিনা অপরাধে ১৪ মাস যাবত সৌদির রিয়াদের থানায় আটক। তার স্ত্রী-সন্তানরা না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমরাও চিন্তিত। সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঘটনা অবগত করেছি কিন্তু দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত তাদের মুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

জমিলা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমার ছেলে ১৪ মাস যাবত বিনা অপরাধে রিয়াদের থানায় আটক। বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছে না, অপরদিকে আমরা চিন্তিত। দুটি নাতি নিয়ে আমি কষ্টে আছি।

ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনউর রশিদ জানান, আমার গ্রামেরসহ এলাকার ৩৯ জন সৌদি আরবের বিভিন্ন থানায় ১৪ মাস যাবত বিনা অপরাধে আটক রয়েছে। তারা আজ মানববন্ধন করেছে। সরকারের কাছে আবেদন তাদের মুক্তির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রেদুয়ান আহমেদ রাফি এ বিষয়ে জানান, ঘটনার বিষয়টির ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা। এটি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেব এবং পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম