Logo
Logo
×

সারাদেশ

গণঅভ্যুত্থানে রফিকুল হত্যা মামলার আসামিরা দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি

Icon

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ পিএম

গণঅভ্যুত্থানে রফিকুল হত্যা মামলার আসামিরা দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত রফিকুল ইসলামের হত্যা মামলায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ২ মাস পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাহিরে। ছেলে হারানো পরিবার এখনো গভীর শোকের মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে।

নিহত রফিকুল মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার মো. রহিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর আনন্দ মিছিলে নৌ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

নিহতের বাবা রহিজ উদ্দিন জানান, রফিকুল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। যেহেতু, তার কোন স্থায়ী চাকরি ছিল না, সে উন্নত জীবিকা অর্জনের জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য কিছু নিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। বাড়িতে থেকে বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতেন।

সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনের কথা উল্লেখ করে রহিজ উদ্দিন আরও বলেন, রফিকুল তার বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে ভোরে বেরিয়েছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে তার বাবা তাকে বাসায় ফিরে আসার জন্য ডাকেন। তিনি উত্তর দিলেন যে, তিনি শীঘ্রই আসছেন, কিন্তু তিনি বাড়ি ফেরেননি। রহিজ উদ্দিন আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘শেষবার যখন আমি তাকে বাসায় ফিরে আসার জন্য ফোন করেছিলাম, তখন সে বলেছিল, ‘আমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসছি’।  

বিকাল ৩টার দিকে কেউ একজন রহিজ উদ্দিনকে ফোন করে জানান, রফিকুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উথুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে আরেকটি ফোন আসে যা তার মৃত্যুর মর্মান্তিক সংবাদ নিশ্চিত করে।   

রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘রফিকুলকে তার বন্ধুরা দ্রুত উথুলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রফিকুলের লাশ ছিনিয়ে নিয়ে স্লোগান দিয়ে শিবালয় থানার দিকে মিছিল করে। রাত ৯টার দিকে রফিকুলের লাশ বাড়িতে পৌঁছলে পোস্টমর্টেম ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। 

বন্ধুদের বরাত দিয়ে রফিকুলের বাবা বলেন, তলপেটে পুলিশের গুলিতে রফিকুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। ছেলেকে গুলি করে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রফিকুলের বাবা।

তিনি বলেন, দেশকে স্বাধীন করতে জীবন উৎসর্গকারী শহিদের তালিকায় আমি আমার ছেলের নাম দেখতে চাই। তার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য তাকে সম্মানিত করা উচিত।

রফিকুলের পরিবারকে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

রফিকুল তার স্ত্রী শাবনূর আক্তার (২০), ১৫ মাস বয়সি মেয়ে রাইসা আক্তার, তার মা, বাবা এবং একমাত্র বোনকে রেখে গেছেন।  

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর রফিকুলের মা সাহের বেগম এখনো শোকে স্তব্ধ। শোকার্ত মা খুনিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা জানি না কিভাবে আমাদের জীবন পরিচালনা করব। অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।’

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন বলেন, এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতার করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।

রফিকুলের পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। নিহত রফিকুলের পরিবারের অর্থনৈতিক কষ্ট দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। 


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম