আ.লীগ নেতা সেই ডা. সাব্বিরের দম্ভোক্তি
‘২৯ টারে বিদায় করছি, লাল কার্ড দেখাইয়া’
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
মৌলভীবাজারের চিকিৎসা খাতে একক আতিপত্য করা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. সাব্বির হোসেন খান এখনো বহাল তবিয়তে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সিন্ডিকেটের মূলহোতাও তিনি। তার কথার বাইরে মৌলভীবাজার সদর কিংবা উপজেলার অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নার্স গেলেই শুরু হতো অপদস্ত, বদলি ও নির্যাতন। তার রোষানলে পড়ে অনেকেই মৌলভীবাজারে চাকরি করতে পারেননি, হয়েছেন স্থানান্তর। জেলার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নানাভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ল্যাবটেস্ট করার জন্য রোগী পাঠাতে বাধ্য করতেন চিকিৎসকদের। অন্যান্য জেলার তুলনায় মৌলভীবাজারে ল্যাব টেস্ট ও অপারেশনের অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করে দিতেন তিনি। অভিযোগের শেষ নেই জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সাব্বির হোসেন খানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের তিনি চিকিৎসা না দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন সরকারি হাসপাতালসহ প্রাইভেট হাসপাতালে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ডা. সাব্বির খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার নিজের আইডি থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে বলেন, ‘২৯টারে বিদায় করছি, লাল কার্ড দেখাইয়া। ভুল বোঝার কিছু নাই, রাজাকার মুক্ত করছি।’ তার এ পোস্টের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। উঠে নিন্দার ঝড়। যদিও সরকার পতনের পরে এ পোস্টটি তিনি সরিয়ে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিলেটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন।
সূত্র বলছে, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি ডা. সাব্বির হোসেন খানের নির্দেশে চিকিৎসক, নার্সরা আহতদের চিকিৎসা দেননি। আহত শিক্ষার্থী ইমাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পর একজন এসে বলেন তুমি কী আকাম করেছ? আমি বলি, ‘কোনো আকাম করিনি। আমি আন্দোলনে ছিলাম। আমার শরীরে আঘাত করা হয়েছে। এ কথা বলতেই তারা এমনভাবে রিঅ্যাক্ট করে যে আমি বড় কোনো অন্যায় করে এসেছি। তারা আমার ট্রিটমেন্ট করেননি। আমাকে ঘুমের স্যালাইন ও ইনজেকশন দেন যাতে আমি ঘুমিয়ে যাই। এরপর রাত ১১টার দিকে ডা. পিয়াস হাসান আমাকে কিছু টেস্ট দেন। টেস্টের পর চিকিৎসক আমাকে তাড়াতাড়ি সিলেট নিতে বলেন।’
সরেজমিন মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল রোডে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গেলে দেখা যায়, সাততলা ফাউন্ডেশনের একটি নতুন ভবনের কাজ চলছে। এখানে হাসপাতালের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে জায়গা ক্রয় করেছেন ডা. সাব্বির হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। সেখানে কাজের দায়িত্বে থাকা শাহিন বলেন, হাসপাতালের মূল মালিক ডা. সাব্বির স্যার। হাসপাতালের শেয়ারে ২৬-২৭ জন রয়েছেন। ওনি প্রতিদিন এখানে আসতেন। সবকিছু দেখাশোনা করেছেন। বর্তমানে ওনি না থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
ডা. সাব্বিরের মামলার শিকার মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিক আজাদুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে ডা. সাব্বির হোসেন খানের মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারী ডায়াবেটিসসহ কয়েকটি টেস্ট করান। সেই রিপোর্ট সিলেটসহ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল প্রমাণিত হয়। সে ভুল রিপোর্টের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন করি। ওই প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পাঁচ কোটি টাকার মিথ্যা মানহানি মামলা করেন ডা. সাব্বির খান। সে মামলাটি ২০১৮ সালে যুগ্ম জেলা জজ আদালত খারিজ করে দেন। ওই চিকিৎসক আবার ২০২১ সালে আপিল করেন। যা এখনো চলমান। এ বিষয়ে ডা. সাব্বির হোসেন খানের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তার ইউনাইটেড কমপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলেও পাওয়া যায়নি।