নাটোরে শ্রমিক আন্দোলনের মুখে প্রাণ এগ্রো বন্ধ ঘোষণা
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম
নাটোরে প্রাণ কারখানা বন্ধ গেট। বৃহস্পতিবার ভিতরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: যুগান্তর
শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে নাটোরে প্রাণ এগ্রো কোম্পানির কারখানা (ফ্যাক্টরি) পাঁচ দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে কারখানার ব্যবস্থাপক হযরত আলীকে। শুক্রবার ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
আগামী মঙ্গলবার সরকারের শ্রম সচিবের সঙ্গে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বেতন বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার দাবিতে শ্রমিকেরা দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানাটিতে ছয় হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। শুক্রবার সকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী প্রাণ কোম্পানি শ্রমিকদেও বেতন দিচ্ছে। এ ছাড়া জুলাই মাসে শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে।
প্রাণ এগ্রো কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, বেতনবৃদ্ধিসহ ১৩ দফা দাবিতে প্রায় এক মাস ধরে কর্মরত শ্রমিকেরা আন্দোলন করছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব দাবি পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এর আগে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়া হয়। ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৬ সেপেটম্বর বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকেরা আবারও কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকেরা কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হযরত আলীকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মাছুদুর রহমান, পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন ও দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তারা কারখানায় ছুটে যান এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করলেও শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করেননি। রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মহাব্যবস্থাপক হযরত আলীকে কারখানা থেকে নিরাপদে বাসায় সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রাণ এগ্রো কর্তৃপক্ষ তাদের নাটোরের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
শুক্রবার সকালে নাটোর সদরের একডালায় প্রাণ কোম্পানিতে গিয়ে কারখানা বন্ধ দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারে সেখানকার কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। প্রধান ফটকও বন্ধ দেখা যায়। জোবায়দা খাতুন ও আসমা বেগম নামে দুই নারী শ্রমিক জানান, ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন না করায় তারা বাধ্য হয়ে আবারো দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনে নেমেছেন।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, ‘কারখানার শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবি দাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে। শুধু বেতনবৃদ্ধির বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুসারে শ্রমিকদের বেতন প্রদান করছি। আগামী মঙ্গলবার সরকারের শ্রম সচিবের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বেতনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’
নাটোরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মাছুদুর রহমান জানান, প্রাণ এগ্রো কোম্পানির মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সরকারের শ্রমসচিবের সঙ্গে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সভা হবে। তত দিন কারখানাটি বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক হযরত আলীকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। কারখানায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।