Logo
Logo
×

সারাদেশ

দোহারে খাল দখলের মহোৎসব, হুমকির মুখে আবাদি কৃষিজমি

Icon

খালিদ হোসেন সুমন, যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম

দোহারে খাল দখলের মহোৎসব, হুমকির মুখে আবাদি কৃষিজমি

ঢাকার দোহারে সুযোগ বুঝে খাল দখলের মহোৎসব চলছে। যে যেখানে পারছেন সেখান থেকেই দখল করে ভরাট করে নিচ্ছেন। আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। খাল দখল করে ভরাট করায় হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি কৃষিজমি। হারাতে বসেছে পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য। কারো কোনো কিছু বলার কিংবা দেখার নেই।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলার অস্থিরতার সুযোগে অনেকেই সদ্ব্যবহার করে চলেছেন। দোহার উপজেলার কুসুমহাটি ইউনিয়নের পুষ্পখালী ও রাইপাড়া ইউনিয়নের ইকরাসি এলাকায় সরকারি খালের মুখ মাটি দিয়ে ভরাট করায় বন্ধ হয়ে গেছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। ফলে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, সবজিখেত। গরু ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত শিশুসহ সব বয়সের মানুষজন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, ওই এলাকার মানুষজন কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। পুষ্পখালী এলাকার কিছু অংশে প্রায় ৩শ বিঘার মতো কৃষিজমি রয়েছে আর অন্য একটি অংশে মানুষের বসবাস। এখানকার কৃষিজমিতে সারা বছরই ধান, পাট, সরিষা, গমসহ নানা ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জমিতে চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সব ফসল। আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি, কার্তিকপুর থেকে পুষ্পখালী হয়ে যে খালটি পালামগঞ্জ খালের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। খালটির মুখে এক ব্যক্তি দেড় মাস আগে মাটি দিয়ে ভরাট করায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া কয়েক দিন ধরে দোহার-শ্রীনগর হয়ে ঢাকা গুলিস্তানগামী আরাম পরিবহণ কর্তৃপক্ষ একটি জায়গা ক্রয় করে তা সরকারি খালসহ ভরাট করার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুষ্পখালী এলাকার পানি কোথাও সরতে পারছে না।

এ বিষয়ে আরাম পরিবহণের পরিচালক মো. মামুন জানান, আশপাশের সবাই যেভাবে দখল করেছে আমরাও সেভাবে দখল করেছি। তবে আমাদের এ পরিবহণ এলাকার মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করবে।

এদিকে টানা বর্ষণে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রত্যেকের বাড়ি থেকে বের হতে এখন হাঁটুপানির উপরে। যার ফলে পানিতে ফসলি জমি ও বাড়িঘর ভাসছে। যে কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার। চলাচলের রাস্তায় হাঁটুপানি থাকায় হাট-বাজার, স্কুল-কলেজসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

পুষ্পখালী এলাকার কৃষক হালিম জানান, এ বছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজির আগাম চাষ করেছিলাম। জলাবদ্ধতায় সব সবজিখেত তলিয়ে গেছে। পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই। আমরা এখন কী করব তা ভেবে পাচ্ছি না।

সফিকুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক জানান, ২০ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলাম। সব ধানই এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এছাড়া ভেসে গেছে তার মাছের ঘের।

এলাকার লোকজন দ্রুত খালের অংশ থেকে ভরাটকৃত মাটি সরিয়ে পানির চলাচল স্বাভাবিক করে কৃষিপণ্যসহ মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন খান ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ দখলদারদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন এবং ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন যুগান্তরকে জানান, পুষ্পখালী ও ইকরাসি হয়ে যে খালটি ইছামতি নদীতে গিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তা কে বা কারা বন্ধ করেছে। সে ব্যাপারে এখনো আমার জানা নেই। তবে যারাই এ ধরনের কাজ করছেন অবশ্যই বিষয়টি আমরা সরেজমিন গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম