কব্জি রেখেই আত্মগোপনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সহযোগী
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম
বগুড়ার শাজাহানপুরে সঙ্গী স্বপন আলীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সাগর তালুকদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অপর সঙ্গী মুক্তার হোসেনের কব্জি হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কব্জি রেখেই তিনি পালিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নিহত সাগর তালুকদার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়ার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। তার সঙ্গী স্বপন আলী একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে ও আহত মুক্তার হোসেন প্রতিবেশী আনসার আলীর ছেলে।
সাগর এক সময় বাসের হেলপারি করতেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার হাত ধরে রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৫-২০ জন সদস্য নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন; যা সাগর বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে মাদক ব্যবসা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় তিনটি হত্যাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুলের মাথাইলচাপড় এলাকায় কলেজ শিক্ষক আওয়ামী লীগ কর্মী শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় সাগর জেলে থাকলেও সেখান থেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
গ্রামবাসীরা আরও জানান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার প্রশ্রয়ে সাগর বাহিনী বগুড়ার নন্দীগ্রাম, কাহালু ও শাজাহানপুর উপজেলা সীমান্তবর্তী অন্তত ৩০ গ্রামে সন্ত্রাস চালিয়ে আসছিলেন। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শাবরুল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মামা-ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজ তার সন্ত্রাসের আখড়া ছিল।
তিনি সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পান। এলাকায় ফিরে আগের মতো তার অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যান। শাবরুলের হরিদেবপুর নামে এক বড় জলাশয় দখল নিয়ে সাগর, স্বপন ও মুক্তার মাছ চাষ করেন। সাগর তালুকদারের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার মাদক ব্যবসায়ী। বাবার কাছেই সাগরের মাদক ব্যবসার হাতেখড়ি। রাজনৈতিক ও পরিবারের প্রশ্রয় পেয়েই সাগর বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাগর, স্বপন ও মুক্তার পুকুর থেকে শাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামে আসেন। এ সময় সেখানে ১৫-২০ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিকে কুপিয়ে সাগর ও স্বপনকে হত্যা করা হয়। এ সময় মুক্তারের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তিনি আত্মগোপন করেন। গ্রামের রাস্তায় ডোবার পাশে সাগরের ও স্থানীয় গফুর নামে এক ব্যক্তির বাড়ির উঠানে স্বপনের লাশ পড়েছিল। এছাড়া রাস্তায় মুক্তারের বাম হাতে কব্জি পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। গ্রামবাসীর ধারণা, নির্যাতিত প্রতিপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা দাবি করেন, সাগর ও স্বপনের মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
নিহত সাগরের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার জানান, ছেলে রোববার বিকালে পুকুর দেখতে গিয়েছিল। ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তার ছেলেসহ দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তিনি দাবি করেন, তার ছেলের সঙ্গে কয়েকজনের শত্রুতা ছিল। এর জের ধরেই প্রতিপক্ষরা এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। তিনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, এ জোড়া খুনের ঘটনায় সোমবার বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। উদ্ধার করা হাতের কব্জি মুক্তার হোসেনের। তবে তিনি কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। শাজাহানপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফারুক হোসেন জানান, এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ দুটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কব্জি বিচ্ছিন্ন মুক্তার হোসেনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি গোপনে কোথাও চিকিৎসা নিচ্ছেন।