প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি
অভিযোগ তুলে নিতে বাদীর দিকে তেড়ে আসেন শিক্ষা তদন্ত কর্মকর্তা
পূবাইল (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম
শিক্ষা কর্মকর্তা
গাজীপুর মহানগরীর ৪১নং ওয়ার্ডের পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবী আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করায় বাদীকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এমনকি অভিযোগকারীকে মারতে তেড়ে আসেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগকারীর নাম ফেরদৌস বেপারী। আর অভিযুক্ত কর্মকর্তার নাম কবির শাহাদাৎ। তিনি তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার। অভিযোগকারীর ভাষ্য, সোমবার তাকে ফোনে ডেকে এনে কড়া ভাষায় হুমকি ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন কবির শাহাদাৎ।
পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবী আক্তারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ এবং নিয়োগের পর তার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রুবী আক্তারের অপসারণ দাবিতে গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেন ফেরদৌস বেপারী।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম অভিযোগগুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শাজাহান ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর থেকে প্রায় এক মাস ধরে রুবীসহ কয়েকজন অভিযুক্ত বিদ্যালয়ে আসেন না।
সোমবার তদন্ত কমিটির আহবায়ক জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার কবির শাহাদাৎ ফোনে ডেকে এনে কড়া ভাষায় ফেরদৌসকে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন। একপর্যায়ে পরিচয় জানতে চাইলে ফেরদৌসকে মারতে তেড়ে আসেন। তিনি তদন্তের ফাইল ছুড়ে ফেলেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক রুবীর স্বামী বাড়িয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জামান ভূইয়া ও সিটির ৪১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন রুবী আক্তারের উপস্থিতিতে ফেরদৌসকে মারতে তেড়ে আসেন।
তাদের সুরে সুর মিলিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জোর গলায় বলতে থাকেন, ‘আমি তদন্ত করব না দেখি কে আমার কী করতে পারে?’ এই বলে তিনি বাদীকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন।
বাদিকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে তদন্ত কর্মকর্তার তেড়ে আসার ভিডিও যুগান্তরের হাতে এসেছে।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শাজাহান উল্টো ফেরদৌসসহ অভিভাবকদের বিরুদ্ধে নালিশ দিতে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি বুঝতে পেরে শাজাহানের অভিযোগ আমলে না নিয়ে শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলেন ফেরদৌসকে।
জানা যায়, গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শাজাহান ও প্রোগ্রামার কবির শাহাদাৎ আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা।
তদন্ত কর্মকর্তা কবির শাহাদাৎ বলেন, আমি তদন্ত করব না। আমি মারতে তেড়ে আসিনি। তাদেরকে আমার রুমে আনতে চাচ্ছিলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শাজাহান এই প্রতিবেদককে তাদের অফিসে যেতে বলেন। বলেন, আমি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগকারীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে- এমন বিষয় প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।