আস্থা-বিশ্বাস ফেরাতে রাঙামাটিতে সম্প্রীতি সমাবেশ
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম
২০ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি-বাঙালির সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার পর রাঙামাটিতে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাস ফেরাতে সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেলা প্রশাসন এ সমাবেশের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মোমারফ হোসেন খান।
সমাবেশে সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. এরশাদ হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসাসহ পদস্থ কর্মকর্তা, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, জেলা জামায়েতের আমির আবদুল আলীম, জনসংহতি সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, ঘটনার দিন গুজব ছড়িয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে উসকানি-উত্তেজনা তৈরি করে পরিস্থিতিকে দ্রুত ভয়াবহ করে তোলে। এতে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে আবেং উভয় সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজনের মাঝে ভয়ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে শহরে ১৪৪ ধারা জারিসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে শহরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এদিন বেলা ১১টায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে তিন পার্বত্য জেলায় ডাকা ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌ অবরোধের কারণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটন এলাকায় ঘুরতে যাওয়া হাজারও পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের বের করা একটি বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রাঙামাটিতে একজন নিহত ও ৬৪ জন আহত হন। এদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।
পরদিন শনিবার উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সরকারের চার উপদেষ্টা রাঙামাটি পরিদর্শন করে গেছেন। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করলে রোববার বেলা ১১টার পর হতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. মোমারফ হোসেন খান।
এদিকে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত রয়েছে। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও শহরসহ জেলায় জনমনে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে।
রোববার সকালে শহরের বনরুপা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. এরশাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেনসহ প্রশাসনিক, সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
অন্যদিকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌ অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা। এতে সমর্থন দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। অবরোধের ফলে রাঙামাটি-নানিয়ারচর-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি-বাঘাইছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া যানবাহন ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদসহ চালক ও শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। এসব কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় রাঙামাটির সাজেক পর্যটন এলাকায় হাজারও পর্যটক আটকা পড়েন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।