সাবেক এমপি বাহার সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা, স্কুলে অচলাবস্থা
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে সাবেক এমপি বাহারের নিয়োগ করা শিক্ষক সিন্ডিকেট। এতে স্বনামধন্য ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে- সিন্ডিকেটের কতিপয় এমপিওভুক্ত এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক মিলে প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে শিক্ষার্থীদের উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে স্থবিরতা নিরসন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রোববার জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে প্রায় ৮ বছর আগে সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে বিদ্যালয়টির ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হলেও তারা আজও কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানপন্থি হওয়ায় সাবেক এমপি বাহার অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করেছিলেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা করেন প্রয়াত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেট। এতে দিবা ও প্রভাতী শাখায় শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৮ হাজার। এমপিওভুক্ত ৪৫ জন এবং নন এমপিওভুক্ত ৯০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।
২০১৬ সালে তৎকালীন সদর আসনের এমপি বাহাউদ্দিন নিজের পছন্দমতো বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি দিয়ে আফজল খানপন্থি ১৯ জন এমপিওভুক্ত ও খণ্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন। দীর্ঘ দিন তারা আইনি মোকাবেলা করে চাকরি ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করলেও বাহারের নির্দেশের কারণে তারা যোগদান করতে পারেননি।
এদিকে সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ের বর্তমান বাহারপন্থি শিক্ষকদের একটি অংশ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করতে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তায় নামান। এ সময় ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে সৈয়দা রোকেয়া বেগম অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তিনি (রোকেয়া) তার অনুসারী সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমান, নীলিমা আক্তার, আবু তাহের, জাহাঙ্গীর আলম, প্রবীর রঞ্জন, মাহফুজুর রহমান, জসিম উদ্দিন ও কামরুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন নন-এমপিও শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তায় বের করিয়েছেন। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে বিদ্যালয়টিতে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যে এসব শিক্ষক এখনো শিক্ষার্থীদের উসকে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে চাকরিচ্যুতরা দায়িত্বে ফিরতে এরই মধ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
চাকরিচ্যুত সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এমপি বাহারের নির্দেশে তার গঠিত কমিটি আমাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার প্রায় ৮ বছর কেটে গেছে। চাকরি ফিরে পেতে আদালত, বোর্ড, শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি, বাহারের ভয়ে কেউ সহায়তা করেনি। আদালতের চিঠির কিংবা নির্দেশনাও তারা বাস্তবায়ন করেনি। সাবেক এমপি বাহারের অনুসারী প্রয়াত সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে কাজে লাগিয়ে রিফাতের ভগিনীপতি তৎকালীন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিভুক্ত ও খণ্ডখালীন শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতির বৈধতা দিয়ে ছিলেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সময়ে আশা করি ন্যায়বিচার পাব এবং চাকরিতে ফিরতে পারব।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি ছিল না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। তাই গত ১৮ আগস্ট শিক্ষকরা গোপন ভোটে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ছাত্রদের ইন্ধন দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামানোর বিষয়টি সঠিক নয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার জ্যোতিকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।