Logo
Logo
×

সারাদেশ

ল্যাব থেকে ল্যাপটপ উধাও, শিক্ষকসহ দুজনকে শোকজ ও থানায় জিডি

Icon

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম

ল্যাব থেকে ল্যাপটপ উধাও, শিক্ষকসহ দুজনকে শোকজ ও থানায় জিডি

নেত্রকোনার মদনে একটি বিদ্যালয়ের ডিজিটাল ল্যাব থেকে ল্যাপটপ উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কম্পিউটার শিক্ষক ও অফিস সহায়ককে দায়িত্বে অবহেলা করায় শোকজ করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। 

উপজেলার বালালী বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মদন থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।  

বিদ্যালয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার, অন্যান্য শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা গত ১১ আগষ্ট শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব পরিদর্শনে যান। সে সময় ল্যাবের ল্যাপটপগুলো গণনা করলে ১৭টির মধ্যে ১৬টি ল্যাপটপ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক কম্পিউটার শিক্ষক মনির হোসেন ও অফিস সহায়ক শেখ মুহাম্মদ শরিফ মিয়ার কাছে ল্যাবের চাবি থাকায় প্রধান শিক্ষক বিষয়টি তাদের কাছে জানতে চান। 

শিক্ষক মনির হোসেন ও শরীফ মিয়ার থেকে সদুত্তর না পেয়ে কর্তব্যে অবহেলা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক  ওয়াহিদুজ্জান ২৪ আগষ্ট তাদের দু’জনকে শোকজ করেন। পরে ওই দিনই মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন প্রধান শিক্ষক। 

বিদ্যালয়টির অফিস সহায়ক শেখ মুহাম্মদ শরিফ মিয়া বলেন, যেদিন থেকে ল্যাপটপটি পাওয়া যাচ্ছে না, সেদিন থেকেই স্যার (প্রধান শিক্ষক) আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার কাছে ওই রুমের চাবি দেওয়ার চেষ্টা করতেছেন। আমার কাছে কোনো সময়ই ওই রুমের কোনো চাবি ছিল না। স্যার (প্রধান শিক্ষক) আমাকে একটি শোকজ নোটিশ দিয়েছেন। আমি এর সঠিক জবাব দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে কম্পিউটার শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ল্যাব রুমের চাবি একমাত্র আমার কাছেই ছিল। পরে স্যার (প্রধান শিক্ষক) অফিস সহায়ক শরিফের কাছেও একটি চাবি দিয়েছেন। তাই আমি স্যারকে (প্রধান শিক্ষক) বলেছিলাম যে, দু’জনের কাছেই যেহেতু চাবি আছে, তাই যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই আমার চাবিটি নিয়ে নেন। কিন্তু স্যার (প্রধান শিক্ষক) আমার চাবিটি নেননি। পরে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে স্যার আমাকে ও অফিস সহায়ক শরিফকে শোকজ করেছে একং থানায় নাকি জিডি করেছে। 

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আমিরুল হাসান খোকন তালুকদার বলেন, আমরা জুন মাসের ৫ তারিখে দায়িত্ব পেয়েছি। এর পর থেকেই ল্যাবে কয়টি ল্যাপটপ রয়েছে- প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলেই তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বেশ কয়েকবার বলার পরেও তিনি কোনো গুরুত্ব দেননি। অবশেষে আগষ্ট মাসের ১১ তারিখ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা, অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে ল্যাবটি পরিদর্শনে যাই। এ সময় ল্যাবে ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ১৬টি পাই। একটি কম পাওয়া যায়। এ সময় উপস্থিত সবার স্বাক্ষর নেওয়া হয়।  

তিনি আরও বলেন, আরেকটি ল্যাপটপ কোথায় আছে- এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট জানতে চাইলে, তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। উনাকে মামলা করার জন্য বলা হলেও নিজের দায় এড়ানোর জন্য আমাদের অবগত না করেই মদন থানায় একটি জিডি করেছেন এবং কম্পিউটার শিক্ষক এবং অফিস সহায়ককে শোকজ করেছেন। 

ম্যানেজিং কমিটির এ সদস্য জোর দিয়ে বলেন, আমরা মনে করি, প্রধান শিক্ষকই ওই ল্যাপটপটি সরিয়েছেন। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ি ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এর আগেও বিদ্যালয়ের কক্ষ থেকে একটি কম্পিউটার হারিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন পর একজনের বাড়ি থেকে কম্পিউটারটি উদ্ধার করা হয়। এখনও শুনলাম একটি কম্পিউটার হারিয়েছে। প্রধান শিক্ষক থানায় জিডি করেছেন। এভাবেই কী তিনি দায়িত্ব এড়াতে চান?

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে ল্যাব পরিদর্শনে যাই। গণনা করে দেখা যায় ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ১৬টি রয়েছে। ওই রুমের চাবি কম্পিউটার শিক্ষক মনির এবং অফিস সহায়ক শরিফের কাছে থাকায় ১টি ল্যাপটপ কোথায় আছে জানতে চাই। তাদের সদুত্তর না পেয়ে দায়িত্বে অবহেলার কারণে দুজনকেই শোকজ করি। পরে তাদের নাম উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মদন থানায় একটি জিডি করেছি। তদন্তের পর প্রয়োজনে মামলা করা হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল বারী জানান, এমন ঘটনা যে বিদ্যালয়ে ঘটেছে, তা আমাকে প্রধান শিক্ষক অবগত করেনি। প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একাডেমিক সুপার ভাইজারকে বলেছি বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য।  আমার মনে হয়, বিদ্যালয়ের যে কেউ এমন কাজ করেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. শাহ আলম মিয়া জানান, এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি জিডি করেছেন।  মাধ্যমিক অফিসারকে তদন্ত করার জন্য বলেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম