বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাসুম বলেছেন, ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে বিভক্তির সুযোগ নিয়ে অনেক মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে, বিভিন্ন কুফরি মতবাদে সংযুক্ত হচ্ছে। তাই আলেম সমাজের ঐক্য অটুট রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ছাড় দিয়ে হলেও আমাদের আলেম সমাজকে সিসাঢালা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার দুপুরে গাজীপুর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত আলেম ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব অনেক। অতীতেও এ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে জালিমের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছেন। তারা ত্যাগ ও কুরবানির পাশাপাশি ইলম ও হেকমতের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানী, শায়েখ আহমদ সারহিন্দ, সৈয়দ আহমদ বেরলভী (রহি) সহ ওলামায়ে কেরাম সামনে থেকে জাতীকে পথ দেখিয়েছেন। 

মাওলানা আবু তাহের বলেন, বিগত ১৮টি বছরের অন্ধকার থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করেছেন। সেজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। গত ১৮ বছর পুরো দেশ ছিল একটি অন্ধকার কারাগার। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দূর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করে বিদেশে বেগম পাড়া গড়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

তিনি আরও বলেছেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করে কোটা পদ্ধতি ও প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বত্র তারা অথর্ব ও দলবাজ লোক দিয়ে নিজেদের মতো করে দেশের মানুষকে জিম্মি করে দেশ পরিচালনা করেছে। ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ সেই জিম্মি-দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে, নতুন করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলাম, মুসলিম জাতিসত্তা গত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর উপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। শহিদ আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ হাজারো ইসলামী আন্দোলনের কর্মীকে তারা শহিদ করেছে।

তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এখনও কাজ করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ও আল্লাহর সাহায্যের উপযোগী হতে হবে। আলেমদের এখন দায়িত্ব হল এই উম্মাহকে জাগিয়ে তোলা, সত্যকে জাতীর কাছে তুলে ধরা। তরুণ প্রজন্মের আলেমদের বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে দুনিয়ার স্বার্থের চেয়ে আখেরাতের প্রত্যাশায় দ্বীনের পথে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের মানুষের মধ্যে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ অর্থাৎ শরীয়া মেনে চলার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলামের পদ্ধতি অনুসরণে এক ধরনের ভীতি কাজ করে, আলেমদের এই ভীতি দূর করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু আলেম এখনও তাগুতি শক্তিকে সহযোগিতা করছে, অনৈসলামিক সংস্কৃতিসহ ইসলাম বিদ্বেষী চিন্তা ধারা লালন করছে।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা অঞ্চল উত্তরের টিম ও গাজীপুর জেলার সাবেক আমির আবুল হাসেম খান, মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের সাবেক খতিব ও নয়াটোলা কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস আল্লামা মুনির আহমদ খান, গাজীপুর মহানগর হেফাজত ইসলামের সহসভাপতি মুফতি লেহাজ উদ্দিন, গাজীপুর মহানগর বেফাক সেক্রেটারি মাওলানা ফজলুর রহমান মুন্সী, সাবেক বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ও বর্তমান আম্বরশাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুর রহিম আল মাদানী।

উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগরের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য খায়রুল হাসান, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হোসেন আলী, আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য সালাহউদ্দিন আইউবী, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।