বগুড়া সদর থানার লুট হওয়া ৩৯ অস্ত্রের মধ্যে ২৬টি এখনো উদ্ধার হয়নি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
বগুড়া সদর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর লুট করা ৩৯টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২৬টি গত দেড় মাসে উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার হয়নি বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ। এ ব্যাপারে আজও মামলা হয়নি।
এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও বৈধ সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা না পড়ায় সেগুলো অবৈধ হয়ে গেছে। খোয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ দুর্বৃত্তদের কাছে থাকায় এসব অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। জনগণ অস্ত্রগুলো উদ্ধারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বগুড়া পুলিশের সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর দুর্বৃত্তরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে সদর থানায় হামলা চালায়। সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে থানা থেকে পালিয়ে যান। এরপর দুর্বৃত্তরা থানায় হামলা চালায়। তারা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শেষে তারা অস্ত্রাগার থেকে থানার ৩৬টি ও পুলিশ লাইন্সের সদস্যদের তিনটিসহ মোট ৩৯টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে।
এছাড়াও লুট ও পুড়ে যায় শটগানের তিন হাজার ৪০০ রাউন্ড কার্তুজ এবং টিয়ারশেল ও দুই হাজার রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি। দুর্বৃত্তরা থানা চত্বরে থাকা শতাধিক আলামতের মোটরসাইকেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুটপাট এবং আগুন দিয়ে কয়েকটি পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কয়েক দিনের অভিযানে লুট হওয়া ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। যার অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এরপর গত ৪৬ দিন পেরিয়ে গেলেও লুট হওয়া ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়া এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত মামলা হয়নি।
বগুড়া সদর থানার এসআই রহিম উদ্দিন জানান, লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। আর মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অপরদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জননিরাপত্তা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ব্যতীত) স্থগিত করে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে স্থায়ী ঠিকানার থানায় বা বর্তমান ঠিকানার নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হবে। এ অবস্থায় বগুড়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাতটি অস্ত্র জমা পড়েনি। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গত ৬ আগস্ট রাতে শহরের সূত্রাপুর এলাকায় এশিয়া সুইটমিটের মালিক নুরুল আলম টুটুলের বাড়িতে তল্লাশি করে একটি একনলা বন্দুক ও ৬৬৩ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে সদর থানায় মামলা হয়েছে। টুটুল পলাতক থাকায় আজ পর্যন্ত তিনি গ্রেফতার হননি।
বগুড়ার পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। এছাড়া জমা না হওয়া বৈধ অস্ত্র নিয়েও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব দ্রুত উদ্ধার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার নাহিয়ান মুনসীফ জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। ওই সব অস্ত্র নিজ জেলার অন্য থানায় বা দেশের অন্যান্য জেলার থানায় জমা দেওয়া না হলে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হবে। এছাড়া অস্ত্রের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।