Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচারে হামজা সিন্ডিকেট

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ পিএম

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচারে হামজা সিন্ডিকেট

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে দেদার ইলিশ পাচার করছে হামজা সিন্ডিকেট। শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেট চোরাই পথে টনে টনে ইলিশ ত্রিপুরায় পাচার করছে।

কুমিল্লা সীমান্তের তিন উপজেলার ৫-৬টি পয়েন্ট দিয়ে বিপুল পরিমাণ ইলিশ পাচার করা হচ্ছে। এতে কুমিল্লার অভ্যন্তরীণ বাজারে ন্যায্যমূল্যে মিলছে না দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।

এদিকে এবারের পূজায় ভারতে ইলিশ রফতানি নিয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি; কিন্তু হামজা সিন্ডিকেটের অপতৎরতায় কুমিল্লা চাঁদপুর নোয়াখালীর অধিকাংশ ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরায়। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা সীমান্তের নিশ্চিন্তপুর এলাকার বাসিন্দা আমির হামজা। সে ওই এলাকার আলী আজ্জমের ছেলে। 

তাকে সীমান্তের চোরাচালানের হোতা বলা হয়। এক কথায় কয়েকশ চোরাকারবারির বস তিনি। পুলিশ বিজিবির সাথে রয়েছে হামজার চরম সখ্যতা। চোরাই চিনি, শাড়ি, মোবাইল, থ্রি পিস, মসল্লাসহ বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় পণ্য চোরাইপথে দেশে আনছে আমির হামজা এবং তার সহযোগীরা। 

গত ১৫ বছর যাবত দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ চোরাইপথে ত্রিপুরায় পাচারের নেপথ্যে এই আমির হামজা। প্রতি বছর মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ায় ন্যায্য দামে ইলিশ ভোগ করতে পারছে না কুমিল্লাসহ আশপাশের জেলার ভোক্তারা। 

হামজা সিন্ডিকেট ভরা মৌসুমে প্রতি রাতেই কুমিল্লার বাজার থেকে সব ইলিশ তুলে নিয়ে ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। ইতোপূর্বে সামনে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ওই সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতি রাতেই আগে থেকে আরও কয়েকগুণ বেশি ইলিশ পাচার করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কয়েকশ টন ইলিশ পাচার হয়েছে। অবৈধভাবে ভারতে পাচার করা হলেও এর সিকিভাগ বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে। 

সূত্র বলছে, সীমান্তের নিশ্চিন্তপুর, বড়জ্বালা, গোলাবাড়ী, শঙ্কুচাইল, শশীদল, চড়ানল, খারেরা সীমান্ত দিয়ে এসব ইলিশ পাচার করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকার মনোরা নামক স্থান থেকে ৪৪০ কেজি ইলিশ জব্দ করে বিজিবি। ৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় ইলিশ গুলো নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে ভারতে পাচারের সময় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার খাড়েরা সীমান্ত থেকে ৬২০ কেজি ইলিশ জব্দ করে বিজিবি। পরে ৯ লাখ ৯২ হাজার টাকায় ইলিশ গুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। 

তবে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে আমির হামজার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

খারেরা সীমান্তের বাসিন্দা মুকুল হোসেন বলেন, এই সীমান্ত দিয়ে যত ইলিশ পাচার হয় সব আমির হামজার মাল। সে আদর্শ সদর থেকে কসবা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার সব চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে।

চড়ানল এলাকার বাসিন্দা বশির আহমেদ বলেন, প্রতি রাতেই টনে টনে পিকআপ ভর্তি ইলিশ ভারতে যাচ্ছে। অথচ আমরা বাজারে গেলে ইলিশ পাই না। আমির হামজা সিন্ডিকেট সব ইলিশ মাছ ভারতে পাচার করে দেশীয় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ইলিশের যে দুটি চালান বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে এগুলো আমির হামজার মাল। 

এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে; বিজিবি পুলিশসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাচার রোধে কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনায় সীমান্তের দিকে আমরা আরও সজাগ দৃষ্টি রাখছি।

বিজিবির-৬০ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এমএ জাবের বিন জব্বার বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি তৎপর রয়েছে। ইতোপূর্বে অভিযান চালিয়ে ইলিশের বড় দুটি চালান আমরা আটক করেছি। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে কোনোভাবেই যেন ইলিশ পাচার না হয়, সেই বিষয়ে আমরা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে বিজিবি সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। আমরা দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ কোনোভাবেই যেন চোরাই পথে ভিন দেশে না যায় সেই বিষয়টি দৃষ্টি রাখছি। পাচার রোধে আমরা সীমান্তবর্তী এলাকার সচেতন মহল এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাও নিচ্ছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম