ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে বিএনপি নেতাদের হুমকির অভিযোগ
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
যশোরের বাঘারপাড়ায় ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এমনকি মামলা তুলে না নিলে গ্রামছাড়া করাসহ নানা হুমকির কথা জানিয়েছেন তারা।
অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুব বিশ্বাস ও স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম রেজা। সেলিম রেজা ভুক্তভোগীর করা ধর্ষণ মামলার আসামির চাচা।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাঘারপাড়া বারভাগ আলিয়া মাদ্রাসার পেছনে একটি বাগানে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে একই এলাকার ১২ বছর বয়সি এক শিশুর বিরুদ্ধে। ঘটনার পরের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর বাঘারপাড়া থানায় ভুক্তভোগী শিশুর নানা বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতারা মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করছেন বলে জানান ভুক্তভোগী শিশুর খালা।
ভিকটিমের এক স্বজন জানান, ওই শিশু দীর্ঘদিন ধরে নানার বাড়িতেই থাকে। ঘটনার দিন দুপুরে বাসার কোথাও তাকে খুঁজে না পেয়ে আলিয়া মাদ্রাসার পেছনে বাগানে গিয়ে দেখতে পান রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটি পড়ে আছে। তখনো অভিযুক্ত ভুক্তভোগীর গায়ের উপর শুয়ে ছিল। স্বজনদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিশুটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঘারপাড়া হাসপাতাল পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, অভিযুক্ত শিশুর চাচা সেলিম রেজা স্থানীয় বিএনপি নেতা। সেলিম রেজার সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুব বিশ্বাস, যুবলীগ নেতা সুজন ও সোহাগ যশোর জেনারেল হাসপাতালে এসে মামলা তুলে নিতে প্রথমে ৫০ হাজার পরে ১ লাখ টাকা দিতে চায় তারা। এ কথায় রাজি না হলে গ্রামছাড়া করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। দফায় দফায় বাড়িতে লোকজন যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে টাকার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার হুমকি দিয়ে আসছেন।
মামলার বাদী বলেন, মামলা করার পর থেকেই বিএনপির নেতারা মামলা তুলে নিতে নানা হুমকি দিচ্ছে। তারা বলে যে, এ মামলায় কিছু হবে না, অহেতুক তোমরা ঝামেলায় পড়বা। তার থেকে ভালো কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নাও। তবে আমি মামলা তুলব না। হুমকির বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেয়নি; তবে দেওয়ার বিষয়ে প্রক্রিয়াধীন।
জামদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুব বিশ্বাসের মোবাইল ফোন নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শামছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করার এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এখন যদি হুমকি দেওয়ার এমন কোনো অভিযোগ করে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল। কারণ এসব বিষয়ে দল কঠোর অবস্থানে আছে।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান রকিব বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে ভুক্তভোগী শিশুকে বুধবার দুপুরে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দিয়েছে যশোর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শিশুটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।