‘নির্বাচিত সরকার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
সালাউদ্দিন
নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ।
বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান। নগরীর আলমাস মোড়ে কেন্দ্রঘোষিত এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস মোড় হয়ে কাজীর দেউড়ি, লাভ লেন, জুবলী রোড়, নিউমার্কেট, কোতোয়ালি হয়ে লালদীঘি পাড়ে শেষ হয়। এতে নেতাকর্মীসহ বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে। নগরী ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মিছিলসহকারে দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে সমাবেশস্থল পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক্ব এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।
এ সময় সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রবর্তন করে। অন্তঃহীন সংগ্রাম, ত্যাগ- তিতীক্ষা, রক্ত, শ্রম এবং প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন, সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। এ গণঅভ্যুত্থানে এ গণবিপ্লবে শহিদদের মধ্যে ৪২২ জন বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ আন্দোলন সংগ্রামে সাতশর বেশি মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হবে। সুতরাং যতদিন সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন আন্দোলন চালু রাখতে হবে।
সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারীর আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের, গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, যদি আইনের শাসনের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, তাহলে শহিদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের চেয়ে বড় নন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাই ধৈর্য্য ধরুন। সবাই সুশৃঙ্খল থাকুন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখুন। যতদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবার ঘোষণা না দেয়, ততদিন এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত সতেরো বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবে না। রাত যত গভীর হয়, ভোর তত কাছে আসে।