কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীর গায়ে আগুন, বাঁচাতে গিয়ে পুড়ল আরও ২ জন
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ ও সাটুরিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
ফাইল ছবি
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় দাম্পত্যকলহের জেরে স্ত্রীসহ তিনজনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন এক যুবক। এতে ওই তিনজনের শরীর ঝলসে গেছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলার গওলা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী হাসান আলী পলাতক রয়েছেন।
অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), তার চাচি শিরিন আক্তার (৫৫) ও চাচাতো ভাই রুবেল হোসেন (৩২)।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
সাটুরিয়া থানা পুলিশ, ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে ধামরাইয়ের রাজাপুর গ্রামের হাসান আলীর সঙ্গে সাটুরিয়া উপজেলার গওলা গ্রামের মৃত আতোয়ার হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তারে বিয়ে হয়। এই দম্পতির ৮ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে হাসান তার স্ত্রী শারমিনকে মারধরও করতেন। এই দাম্পত্য কলহের জেরে গত সোমবার অভিমান করে ছেলেকে নিয়ে শারমিন গওলা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসেন।
শুক্রবার সকালে হাসান শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিন পাশের চাচার বাড়িতে যান। সকাল ১০টার দিকে হাসান চাচা শ্বশুরের ঘরের ভেতর গিয়ে শারমিনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এসময় শারমিনের চাচি শিরিন ও চাচাতো ভাই রুবেল তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাদের শরীরেও কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন অভিযুক্ত হাসান। এতে শারমিন ও তার চাচি শিরিন ও চাচাতো ভাই রুবেলের গায়ে আগুন ধরে যায়। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ততক্ষণে তাদের তিনজনের শরীর আগুনে ঝলসে যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে শিরিন ও রুবেলকে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে শারমিনকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে শারমিনের মামা মো. বাসু বলেন, বিনা কারণে হাসান তার ভাগনি শারমিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। এ নিয়ে সামাজিকভাবে মীমাংসা জন্য একাধিকবার সালিশও হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার ভাগনিকে হত্যার উদ্দেশে হাসান শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। তাকে উদ্ধার করতে গেলে আরও দুইজন আগুনে ঝলসে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মানবেন্দ্র বালো বলেন, খবর পেয়ে ওই বাড়িতে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্যকলহের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।