হাটহাজারী মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যা মামলায় সাবেক ওসি রফিকুল গ্রেফতার
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গুলিতে হেফাজতে ইসলামের কর্মী ও হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ রবিউল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া হাটহাজারী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার বিকেলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৬ আদালতের বিচারক নুরুল হারুন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার নবাগত ওসি মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে গ্রেফতার রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হাটহাজারী থানা পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি হাটহাজারী না পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলে জানান।
এর আগে হাটহাজারী থানার ওসি (অপারেশন) মোল্লা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ রবিউল ইসলাম হত্যার কারণ, আসামিদের অবস্থান নির্ণয় এবং হত্যাকাণ্ডের ইন্ধনদাতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক ওসি রফিকুল ইসলামকে সাত দিনের হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কর্মস্থল ঢাকার উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে শুক্রবার দুপুরে আদালতে হাজির করে পুলিশ। গ্রেফতার এই পুলিশ কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানা এলাকায়। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী খান।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে হাফেজ রবিউল ইসলাম (২৪) নিহত হন। এই ঘটনায় এবাদত কর্মী ও মাদ্রাসা ছাত্র রফিকুল ইসলামের বাবা আব্দুল জব্বার বাদী গত ২৩ আগস্ট হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা মামলা দায়ের করেন ।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর করা ওই হত্যানমামলায় হাটহাজারী মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, চট্টগ্রাম জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক, হাটহাজারী সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম ও শাহাদাত হোসেন, হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক রাজীব শর্মা, কেশব চক্রবর্তী, শফিকুল ইসলাম ও আমির হোসেন, সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) যথাক্রমে মুকিব হাসান, কবির হোসেন ও জসীম উদ্দীন। ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল আলম ও ইউনুস গণি চৌধুরী, হাটহাজারী পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মনজুরুল আলম চৌধুরী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসির হায়দার।
এছাড়া হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মইনুদ্দিন রুহি ও ফটিকছড়ির নাজিরহাট মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক মাওলানা সলিমুল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। তারা হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমেদ শফির ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া কই মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্য ও অজ্ঞাত পরিচয় ১০০-১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগমনের প্রতিবাদে সেদিন দুপুরে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করেছিলেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সেখানে গুলিতে মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থী নিহত হন। সেদিন মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে। গুলির ঘটনায় আসামিরা জড়িত।
এদিকে ঘটনার দিন হাটহাজারী থানা, ভূমি অফিস ও সরকারি ডাক বাংলোয় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়। এসব মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলাগুলো এখনো তদন্তাধীন রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে।