জাস্টিন ট্রুডোর নামে জন্মসনদ, জালিয়াতি চক্রের হোতা গ্রেফতার
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পিএম
পাবনায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জন্মসনদ দেওয়ার জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা নিলয় পারভেজ ইমনকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা বুধবার ভোরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাবনা সদর উপজেলার অজ্ঞাত স্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার ইমন পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের আহম্মদপুর গ্রামের মো. আলতাব হোসেনের ছেলে। এ বছরের মার্চ মাসে সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রুডোর নামে ইস্যু করা হয় জন্মনিবন্ধন সনদ।
এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রচার হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যসহ প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, ঘটনাটি জানাজানি হলে তা টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়। এ ঘটনায় সরকারের রেজিস্ট্রেশন জেনারেলের কার্যালয় থেকে পাবনার জেলা প্রশাসনকে তদন্ত কমিটি করে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতেও বলা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছিল তাতে দেখা গেছে, নাম জাস্টিন ট্রুডো, পিতা- পিয়েরে ট্রুডো, মাতা- মার্গারেট ট্রডো। তিনি কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বের এই আলোচিত প্রধানমন্ত্রীকেই জন্মসূত্রে নাগরিক হিসেবে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতার নিলয় পারভেজ ইমন ছিলেন আহম্মদপুর ইউনিয়নের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর। গত বছরের শেষের দিকে আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মিয়া মারা গেলে। এক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ইউনিয়নের নানা কাজকর্ম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আওলাদ হাসানের হাতেই থাকে। সচিবের তদারকিতে পরিষদের চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন টাকার বিনিময়ে সেবা গ্রহীতাদের কাজ করে দিতেন।
ইমন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জন্ম নিবন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেবার ক্ষেত্রে ওটিপি নম্বর সচিবের কাছে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাস্টিন ট্রুডোর নামে যে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে সেটির প্রিন্ট দেওয়া হয়েছে রাত ৯টায়। কাজেই ওই সময় ওটিপি নম্বর সচিব না দিলে ইমন তা কোথায় পেয়েছে। মূলত সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পরস্পরের যোগসাজশেই এসব কাণ্ড ঘটছে।
এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারেরও এখানে দায়িত্ব ছিল; কিন্তু জালিয়াতির ঘটনা ধরা পরার পর সব দোষ ইমনের উপর চাপালে তিনি পালিয়ে যান। জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টও আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্ট ইউএনও বদলি হয়ে যান। অভিযোগ ওঠে ইউএনওর সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করা যায় না। এজন্য তদন্তে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিলয় লোকজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, বিভিন্ন শিক্ষাসনদ এমনকি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের মতো স্পর্শকাতর নথিপত্র তৈরি করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তাকে জেলার আমিনপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।