Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ১৪ বছর ডিডির চেয়ারে ড. শরমিন!

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ১৪ বছর ডিডির চেয়ারে ড. শরমিন!

ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী

টানা ১৪ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর নিজের চেয়ার আগলে রাখতে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়।

এক্ষেত্রে ড. শরমিনের ক্ষমতা, প্রভাব আর দাপটের নেপথ্যের ব্যক্তিটি ছিলেন ‘রাজশাহীর ভাবি’ হিসেবে পরিচিত সাবেক সিটি মেয়র আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহধর্মিণী শাহীন আক্তার রেনী। অভিযোগ রয়েছে, ভাবির নাম ব্যবহার করেই তিনি তার চেয়ার আগলে রেখেছেন। 

ড. শরমিনের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য, অনিয়মের মাধ্যমে এমপিও, উচ্চতর বেতন স্কেলের নামে ‘উৎকোচ’ গ্রহণ এবং অধিনস্তদের সঙ্গে অসদাচারণসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তিনি এখনো স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।   

এদিকে গত ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তার অপসারণের দাবিতে পরপর দুই দিন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই দুই দিন নির্ধারিত সময়ে অফিস যাননি ডিডি শরমিন। এখনো তিনি খুব সকালে কিছু সময় এবং বিকালের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে বসেন। সারাদিন অফিসে না থাকার কারণে নানা কাজে আসা শিক্ষকরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার। 

এ অবস্থায় ড. শরমিনের অপসারণ দাবি করে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে গত ১৪ আগস্ট অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা। সংগঠনের জেলার এবং মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া স্বাক্ষর করেছেন জেলার নয়টি উপজেলার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও। 

এছাড়া জেলার বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক আবু সাঈদ কিসলু গত ২৯ আগস্ট আরেকটি অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর দিয়েছেন। 

শিক্ষক সমিতির অভিযোগে বলা হয়, ড. শরমিন প্রায় ১৪ বছর ধরে মাউশির ভারপ্রাপ্ত ডিডি হিসেবে রাজশাহী অঞ্চলে কর্মরত। তার সীমাহীন অত্যাচার আর নির্যাতনে এ অঞ্চলের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। তিনি সরকারি বিধি অমান্য করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির ফাইল বাতিল এবং পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কাজগুলো করে থাকেন। 

অভিযোগে বলা হয়, অধীনস্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের তুই-তুকারি করে অবজ্ঞা করেন ডিডি শরমিন। ইতোপূর্বে অনেকবার তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কাজ হয়নি। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির বিনিময়ে সর্বদা সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন ড. শরমিন। তাই তাকে এই মুহূর্তে জরুরিভিত্তিতে রাজশাহী থেকে বদলি করে রাজশাহী অঞ্চলের নির্যাতিত শিক্ষক কর্মচারীদের ‘রক্ষা’ করার আবেদন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ড. শরমিন রাজশাহীর প্রমথনাথ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১২ সালে তাকে মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক গোপনীয় প্রতিবেদনে মাউশির ১৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউশিকে নির্দেশ দেয়। তখন ড. শরমিনকে রাজশাহী থেকে ঢাকায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। 

কিন্তু রাজশাহী ফিরতে তদবির শুরু করেন ড. শরমিন। ফলে মাত্র সাত মাসের মধ্যেই তিনি আবার রাজশাহী অঞ্চলের ডিডি হয়ে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি এখনো আছেন। ডিডি শরমিনের সঙ্গে তার অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিচিত প্রোগ্রামার মো. মামুন ও উচ্চমান সহকারী আবদুল আওয়ালকেও সেই সময় ঢাকায় বদলি করা হয়। কিন্তু একই সময়ের মধ্যে তারাও ডিডি শরমিনের সঙ্গে রাজশাহী ফিরে আসেন। 

অপরদিকে গত ২৯ আগস্ট মাউশির সচিব বরাবর লিখিত শিক্ষক আবু সাঈদ কিসলু তার অভিযোগে ড. শরমিনের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরেন। প্রমাণ হিসেবে সংযুক্ত করেছেন বিভিন্ন কাগজপত্র। সংশ্লিষ্ট পদস্থ যে কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে নিরপেক্ষভাবে অভিযোগগুলোর তদন্ত করানোর অনুরোধ জানান তিনি। 

ওই অভিযোগে বলা হয়, ড. শরমিন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘুস নেন। শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কোনো শিক্ষক কথা বললেই তাকে রাজশাহী বিভাগের বাইরে বদলি করেন। ডিডি শরমিন অনিয়ম করে অনেকের এমপিও করেছেন। এদের কারো ছিল জাল সনদ। কারো ক্ষেত্রে মানা হয়নি জনবল কাঠামো নীতিমালা। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ২০১৮ সালে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একবার তদন্তের মুখে পড়েছিলেন ড. শরমিন। তখনো তিনি পার পেয়ে যান।

শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, ড. শরমিন নিজেকে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী রেনীর বান্ধবী বলে পরিচয় দেন। রেনীর সঙ্গে তিনি পড়াশোনা করেছেন বলেও দাবি করেন। তাই আওয়ামী সরকারের আমলে রেনীর প্রভাবে দাপটের সঙ্গে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেও পার পেয়েছেন। রেনী তদবির করে তাকে মাউশির ভারপ্রাপ্ত ডিডি হিসেবে রাখেন প্রায় ১৪ বছর। 

তবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, কারা অভিযোগ করেছেন, সেটি বলতে পারব না। আমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকে একই অভিযোগ অসংখ্যবার করা হয়েছে। 

অধীনস্তদের সঙ্গে অসদাচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি অনেককেই তুই বলে সম্বোধন করি। এটা স্নেহের দৃষ্টিভঙ্গিতে করি। আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আমার পদে থাকার অভিযোগও ভিত্তিহীন। সাবেক মেয়রপত্নী আমার ছাত্রজীবন থেকে পরিচিত ছিলেন। এ কারণে তার সঙ্গে আমার কিছুটা ঘনিষ্ঠতা ছিল।     

মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, মাউশির রাজশাহীর ডিডি ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। তবে নিয়োগ কিংবা বদলির ক্ষমতা আমরা রাখি না। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে আমরা অনুরোধ জানাব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম