Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘মাছ লুট করতে না পেরে’ বিএনপি নেতাকে হত্যার হুমকি আরেক নেতার

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম

‘মাছ লুট করতে না পেরে’ বিএনপি নেতাকে হত্যার হুমকি আরেক নেতার

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর যুবলীগ নেতার পুকুর থেকে মাছ লুট করতে না পেরে বিএনপির এক নেতা আরেক নেতাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। দুজনের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

গালিগালাজ করা অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম হযরত আলী। তিনি গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী বিএনপি নেতার নাম শরিফুল ইসলাম বিশু। গোদাগাড়ী পৌরসভার জাহানাবাদ মহল্লায় তার বাড়ি।

হযরতের দাবি, বিশু আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন।

তবে বিশুর দাবি, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি গোদাগাড়ীর ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০২০ সালের স্থগিত হয়ে যাওয়া ওয়ার্ড সম্মেলনে তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কমিটি না হলেও তিনি অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।

দুজনের ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনে শোনা যায়, প্রথমেই শরিফুল ইসলাম বিশুকে ফোন করে সাবেক যুবদল নেতা হযরত আলী বলছেন, ‘বড় আওয়ামী লীগার তুমি, কাগজপত্র বের করছ পুকুরের। এই এলাকা থেকে কত টাকা তুললা হিসাবটা রাখো।’ 

বিশু বলেন, ‘আওয়ামী লীগার বলতে কি বোঝাচ্ছেন আপনি?’ হযরত উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘...ব্যাটা গোগ্রাম ইউনিয়ন থেকে কত টাকা তুলেছিস, হিসাবটা রাখিস। এখন কাগজপত্র বাহির কর.....ছিস।’ বিশু  বলেন, ‘ভাষা খারাপ করছেন কেন আপনি?’

হযরত তখন আরও উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘আমি হযরত চেয়ারম্যান বললাম কিন্তু, ...ব্যাটা তুই রেডি থাক, তুই রেডি হইয়া যা, তুই কত বড় আওয়ামী লীগ। তোর নামে মামলা হয়েছে।’

বিশু তখন বলেন, ‘তদবির করে নাম দেওয়া যায়। আপনি নাম দিয়েছেন। যে ভাষাগুলা বললেন তা আমার মুখেও আছে কিন্তু আমি বলব না।’

হযরত বলেন, ‘তুই রেডি থাকিস, তোকে তোর বাড়িত থেকে লিয়্যাসবো। তুই আওয়ামী লীগ।’

বিশু বলেন, ‘আমি বিএনপি।’

তখন হযরত গালি দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির সার্টিফিকেট তোকে দিয়েছে কোন …। ওই .. কে দেখতে চাই।’

এ সময় বিশু বলেন, ‘আপনি বিএনপি, আপনি ব্যারিস্টার আমিনুল হকেরও বিপক্ষে গেছেন। আমরা কোনোদিন যাইনি।’ হযরত তখন বলেন, ‘ব্যারিস্টার আমিনুল হক তোর...হয়, স্বীকৃতিটা লে ওখান থেকে। তারপর দেখছি তোকে আই।’ এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এই কথোপকথনের ব্যাপারে শরিফুল ইসলাম বিশু বলেন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বিপ্লব গোগ্রাম এলাকায় ৮টি সরকারি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করেন। গত ৩ আগস্ট বিপ্লব ভারতে চলে গেছেন। এখন দেশে ফিরতে পারছেন না। ৫ আগস্টের পর তিনি ১৪ লাখ টাকায় মাছসহ পুকুরগুলো নাসিম নামের এক বিএনপি নেতার কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই পুকুর বিক্রি করতে হলে ইউএনও অফিস থেকে বিপ্লবের পুকুর ইজারার কাগজগুলো দরকার। আমি সেই কাগজ তুলে দিয়েছি বলে সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ তিনি তার লোকজন দিয়ে পুকুরগুলো দখল করে রেখেছিলেন। ইজারার কাগজ না পেলে পুকুরগুলো বিক্রি হতো না। তখন পুকুরগুলোর মাছ লুটের পাশাপাশি সেগুলো দখল করতেন হযরত। এ জন্য বার বার তিনি ফোনে আমাকে পুকুরের কাগজপত্র বের করার প্রসঙ্গ তুলে গালি দেন। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেন।

জানতে চাইলে হযরত আলী বিপ্লবের পুকুর দখলের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিশু আওয়ামী লীগের লোক। এতদিন পুকুর সিন্ডিকেট চালিয়েছে। একটা পুকুরের টাকায় সরকারি চারটা পুকুর ইজারা নিয়েছে। সেই পুকুর আবার দ্বিতীয় দফায় ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাই করেছে। সে এক পুকুর একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে এলাকায় বিরোধ তৈরি করেছে। এখন আবার সে বিএনপি সাজছে। এজন্য একটু হটটক হয়ে গেছে।

ইউএনওর কাছে বিশুর অভিযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে হযরত আলী বলেন, অভিযোগ করেছে, আইনে যা আছে আমার হবে; কিন্তু আমিও তার নামে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করব। সে আমার কথা অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করেছে। এটা তো সে পারে না।

গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, শরিফুল ইসলাম বিশু নামের এক ব্যক্তি একটা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অডিও রেকর্ডও পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা দেখছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম