Logo
Logo
×

সারাদেশ

খালেদা জিয়ার প্রতীকী সাজায় ঝড় বয়ে যায় স্কুলছাত্রীর পরিবারের ওপর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৭ পিএম

স্বাধীনতা দিবসে নারী জাগরণের অগ্রদূতদের তুলে ধরতে বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীকী সাজে সজ্জিত হয় স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা। ডিসপ্লে করে দেশে যুগে যুগে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়। কেউ সাজে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডা. দীপু মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি, নারী ফুটবলার, ক্রিকেটারসহ বিশিষ্ট নারীর প্রতীকী সাজ। শিক্ষার্থী আননূর জাহান তাহা সেজেছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে।

এ ঘটনায় তাহা, তার পরিবার, স্কুলকে হতে হয় বিড়ম্বনার শিকার। এমনকি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে করা হয় শোকজ। ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতীকী সাজ নেওয়া শিক্ষার্থী আননূর জাহান তাহা লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্রী। তার বাবা স্থানীয় লোহাগড়া পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। এ ঘটনায় তাকেও চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখন তাহা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর আলী দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তসলিম উদ্দিনকে শোকজ করেন। শোকজ চিঠিতে লেখা হয়, দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ডিসপ্লেটি মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

এ ঘটনায় খালেদা জিয়ার ডিসপ্লে প্রদর্শনের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় এবং পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত বক্তব্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে তাহাসহ তার পরিবারের লোকজনকে দীর্ঘদিন নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকতে হয়। সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হতে হয় তাদের। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চাকরি ফিরে পেয়েছেন তাহার বাবা।

ওইদিনের ঘটনার বিষয়ে দি লিটল সেইন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক তসলিম উদ্দিন বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে নারী জাগরণের প্রতি একটি থিম তুলে ধরা হয়। এই থিমে বেগম রোকেয়ার চরিত্রসহ যুগে যুগে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে সাজার কারণে আমার স্কুলকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ভূঁইয়া শিক্ষকদের হুমকি দেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাহা বলে, ডিসপ্লেতে খালেদা জিয়ার প্রতীকী রূপে সাজায় আমার বাবাকে পৌরসভার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে খুবই কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেছি। এ কাজগুলো যারা করেছে তাদের বিচার চাই। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও কথা বলার অধিকার চাই।

কথা হয় তাহার মা হালিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমার মেয়ে খালেদা জিয়া সাজার কারণে প্রশাসনিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদের জীবনে ঝড় বয়ে গেছে। আমার স্বামীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ ঘটনার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। তারেক রহমান শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। স্বাধীন দেশে সব মানুষ যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। কোনো শিশু যেন এভাবে মানসিক ট্রমায় না পড়ে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়া সাজা শিক্ষার্থী তাহার পরিবারের পাশে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে।

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহুরুল ইসলাম বলেন, তখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সন্তোষজনক জবাব দেওয়ায় আর কোনো কিছু হয়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম