Logo
Logo
×

সারাদেশ

রায়পুরে বিএনপির দখলদারিত্ব নিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ

Icon

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৫ এএম

রায়পুরে বিএনপির দখলদারিত্ব নিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সিএনজি-বাসস্ট্যান্ড-মাছঘাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকটি বাজার দখলে নেন বিএনপিপন্থীরা। দখল হওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আগে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখল দারিত্ব উচ্ছেদ করে এবং নামমাত্র টাকা দিয়ে কিনে এখন প্রকাশ্যে বিএনপিপন্থীরা দখল করছে। বিভিন্নস্থানে অস্থিরতা, আধিপত্য বিস্তার কোন্দল বাড়ছে। 

এসব ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রায়পুরের হাজিমারা মাছঘাট মালিক জাকির হোসে মোল্লা, আলতাফ মাস্টার ঘাট মালিকের পক্ষে তারই ম্যানেজার মোহন হাওলাদার ও সাইজুদ্দিন মোল্লার ঘাট মালিক তিনি নিজেই বাদি হয়ে ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের নামে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৩ দিনেও কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মোহন হাওলাদার।

অভিযোগ উঠেছে, রায়পুর বাস টার্মিনালসহ ৮টি অটো-সিএনজি স্টেশান ২০২৪-০২৫ অর্থ বছরের জন্য ২ জুলাই পৌরসভা থেকে ২৭ লাখ টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা নেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারভির হায়দার চৌধুরী রিংকুসহ ৮ জনকে। দেশের পটপরিবর্তনে আ.লীগপন্থী ৮ ইজাদার পালিয়ে গেলে নামমাত্র টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। 

অপরদিকে- বাস মালিক সমিতির প্রায় ৩০০টি বাস থেকে দিনে ২০ -৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে।

আ.লীগ নেতা তানভির হায়দার রিংকু ও হোসেন মোবাইলে জানান, আমি এবং আমার স্ত্রীসহ ৮ জনের নামে পৌরসভা থেকে ইজারার মাধ্যমে বাসটার্মিনাল ও ৮টি অটোসিএনজি স্টান্ডের দায়িত্ব নেই। আমাদের ওপর হামলার ভয়ে আত্মগোপনে থাকায় গত ৫ আগষ্ট থেকে বিএনপির নেতারা স্টান্ডগুলো  দখলে নেয়।

লক্ষ্মীপুর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হাজি শাহজাহান ও বাস মালিক নিজাম উদ্দিন শিপন মোবাইলফোনে জানান, রায়পুরে লোকালসহ প্রায় ৩০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। বাস মালিক সমিতি হচ্ছে একটি ব্যবসায়িক সমিতি। ব্যবসা পরিচালনার জন্য কাঠামোগত প্রক্রিয়া সবসময়ে সচল রাখতে হয়। কিন্তু আগের কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা নুরনবি চৌধুরী আমেরিকা ও সাধারন সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সালাহ উদ্দিন টিপু পলাতক থাকায় কমিটির কার্যক্রম হযবরল অবস্থায় রয়েছে। রায়পুরে ৫০ জন বাস মালিক সাধারণ সভা করে কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আগের মত চাঁদা তোলা হয়না। শুধু কেরানিদের জন্য ৮০টি  আনন্দ পরিবহনণের নামের লোকাল বাস থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে উত্তোলন হয়ে থাকে।

অন্যদিকে- আওয়ামীপন্থীদের দখলে থাকা  দক্ষিন চরবংশী ইউপির মোল্লারহাট গরুর বাজার, কাঁচা বাজার, খাসেরহাট বাজার, মীরগন্জ বাজার, রাহুল ঘাটটি বিএনপি নেতা বাদশা গাজি, হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে মাছঘাট সাবেক মেম্বার গিয়াস উদ্দিন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ মাস্টারের মাছঘাট এবাদ উল্লাহ, জিএম শামিম গাজি ও হায়দরগন্জের পরের সাজু মোল্লার মাছঘাট ফারুক সর্দার ও সফি মোল্লাসহ ২৮টি বাজার-মাছঘাটদখলে নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

গত ৫ আগস্ট রায়পুর থানা এবং শহরে অবস্থিত কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বসতবাড়ি, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। মেঘনা নদীর তীরবর্তী ৯টিরও বেশি মৎস্য অবতরণ ঘাট দখল করা হয়। এর পাশাপাশি উপজেলার কৃষি খামার দখল ও চাঁদা নির্ধারিত করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। 

এ বিষয়ে জানতে শামিম, ফারুক সর্দার ও সফি মোল্লার  বিরুদ্ধে যে সব দখলের অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তাদেরই ছিল। কিন্তু এগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় তার দখল তারাই বুঝে নিয়েছেন।

রায়পুরের চরবংশী ইউপি থেকে বরিশালের মেহেদীগন্জ ও গোবিন্দপুর যাওয়ার পথে মিয়ারহাট, পানিরঘাট ও সৈয়ালগো বাজার খেয়াঘাটও দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ‘সরকার পতনের পর আমার দুটি ঘাটই বিএনপির লোকরা দখলে নিয়েছে। আওয়ামী লীগে আমার কোনো পদবি নেই। এরপরও আমার বৈধ ঘাট দখল হয়ে গেছে।’ 

আমার মাছঘাটটি ফেরত পেতে ঘাট ম্যানেজার মোহন হাওলাদার বাদি হয়ে বিএনপি নেতা এবাদ উল্লাহ গাজি ও জিএম শামিম গাজিসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইউএনও ও সেনা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন কার্যকর হচ্ছেনা।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা এবাদ উল্লাহ ও জিএম শামিম গাজি বলেন, ‘লঞ্চ ও মাছ ঘাট দখলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আ.লীগ নেতা আলতাফ মাস্টার এতদিন ঘাট দখল করেছিলেন, তিনি সেগুলো ফেলে রেখে আত্মগোপনে গেছেন। এটি তো আর দখল না।’

রায়পুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘রায়পুরে ৯টি মাছঘাটের ৪টি দখল হয়। তবে ভাঙচুর করেনি বিক্ষুব্ধরা। সরকার পতনের পর আলতাফ মাস্টার মাছঘাট ও খেয়াঘাটের ইজারাদার পালিয়েছেন। পরে খেয়া পারাপার আর লঞ্চঘাটের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছিল। হয়তো বিএনপির লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘাট পরিচালনা করছেন।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, বেদখল হওয়া দুটি মাছঘাট ফেরত পেতে দুই লোক লিখিত অভিযোগ করেন। তা তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিব।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) লক্ষ্মীপুরের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, একপক্ষ চলে গেছে আরেক পক্ষ এসে দখল করছে। সরকার আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে না পারায় বিভিন্ন স্থানে দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি চলছেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম