Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদক (ঢাকা উত্তর) 

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২৭ পিএম

ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

ফাইল ছবি

ভ্যানের ওপর কয়েকটি মরদেহের স্তূপ ঢেকে রাখা হয়েছে জীর্ণ একটি চাদর দিয়ে। সেখানে আরও মরদেহ উঠাচ্ছে পুলিশের হেলমেট ও ভেস্ট পরিহিত দুই পুলিশ সদস্য। চাদরের পাশ দিয়ে নিহতদের ঝুঁলে থাকা সারি সারি হাত দেখা যাচ্ছে। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বার্তা সংস্থার এএফপির ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দিন শিশির। 

তিনি জানান, ঘটনাটি গত ৫ আগস্টের। ঢাকা উত্তরের আশুলিয়া থানার নিকটবর্তী বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের গলি দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর থানার ভবনের আগের জায়গায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। 

শনিবার ১২ টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সঙ্গে ভাইরাল ওই ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পান  স্থানীয় সাংবাদিকরা। 

এছাড়া ভিডিওটির শেষের দিকে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

স্থানীয় কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এসময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারী থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান। 

আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খোলেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বিকাল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিকাল ৪টার দিকে থানায় হামলার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। 

এ সময় পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। তবে ভ্যানে লাশ স্তূপ করার ঘটনাটি তিনি দেখেননি বলে জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আশুলিয়া থানা মুখে অগ্রসর হলে নির্বিচারে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে সেই লাশগুলো একটি ভ্যানে তোলা হয়। সেখান থেকে একটি পিকআপে স্থানান্তর করার পরে গণহত্যার চিত্র মুছে ফেলতে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হতভাগ্যদের মধ্যে ছিলেন সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়া স্কুলছাত্র আস-সাবুর (১৬)। 

তিনি আশুলিয়ার জামগড়া শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা এনাফ নায়েদকর ছেলে। আস-সাবুর স্থানীয় শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের গণহত্যার নিষ্ঠুর ও নৃশংস এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় সাহিদ হাসান ওরফে মিঠু বাদী হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদসহ আওয়ামী লীগের ১১৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে সবার আগে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে মামলাটি দায়ের করার অভিযোগ এনে নিহত আস-সাবুরের মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌসী বাদি হয়ে সন্তান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুনরায় মামলা দায়ের করেন।

ভিডিওতে ভ্যানে তোলা কয়েকটি মরদেহের স্তূপের পাশে পুলিশকে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখা গেছে। তাদের একজনের পরিচয় ইতোমধ্যে শনাক্ত করা গেছে। 

তিনি ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলার গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন আরাফাত। 

ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, সেদিন ‘ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আব্দুল্লা হিল কাফী স্যারের নির্দেশে আমরা আশুলিয়ায় ছিলাম। আল্লাহর রহমতে ৫ আগস্ট আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলাম। নইলে আমাদেরকেও মরতে হতো।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিডিও চিত্রে থাকা ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সরকারি মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম