আট বছর আগে তুলে নিয়ে গুমের অভিযোগ, আদালতে মামলার আবেদন স্ত্রীর
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৫ পিএম
ইসমাইল। ফাইল ছবি
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এক ব্যবসায়ীকে গুম করার অভিযোগে আট বছর পর আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তার স্ত্রী। ২০১৬ সালে র্যাব-৫ এর রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পে কর্মরত সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার আমলী আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিখোঁজ ইসমাইলের স্ত্রী নাইস খাতুন (৩০)।
নাইসের অভিযোগ, তার স্বামী ছিলেন স্বর্ণকার। ইসমাইল হোসেনকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে তৎকালীন র্যাবে কর্মরত কিছু লোক। নাইস যাদের আসামি করার আবেদন করেছেন তারা হলেন- র্যাব-৫ এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, ল্যান্স নায়েক মাহিনুর খাতুন, সিপাহী কহিনুর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।
নাইসের আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত বাদীর বক্তব্য শুনেছেন। তবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আদালত মামলার বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি। বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারক লিটন হোসেন এ বিষয়ে আদেশ দিবেন বলে আইনজীবী আশা করেছেন।
জানা গেছে, নিখোঁজ ইসমাইলের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর গ্রামে। তার স্ত্রীর অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার স্বামী ইসমাইল হোসেন (৩০) বাজারের দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছলে র্যাব সদস্যরা তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিন দিন পর ইসমাইল অন্য এক ব্যক্তির মোবাইল নম্বর থেকে কল করে তাকে জানান, তিনি র্যাবের হেফাজতে আছেন।
নাইস এজাহারে বলেছেন, র্যাব সদস্যরা যখন ইসমাইলকে তুলে নিয়ে যান তখন অনেকেই দেখেছেন। এছাড়া মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি র্যাব ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় সেখানে ইসমাইল হোসেনকে দেখেছেন। ইসমাইল র্যাব হেফাজতে আছেন জেনে তারা ওই সময় র্যাব-৫ এর অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন; কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। নাইস জানান, র্যাব ক্যাম্পে থাকা যে দুই ব্যক্তি ইসমাইলকে দেখেন এবং যারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন তাদের সাক্ষী করা হয়েছে।
নাইস আশঙ্কা করছেন, র্যাব সদস্যরা তার স্বামীকে তুলে নেওয়ার পর হত্যা করে লাশ গুম করেছেন। এতদিন পর্যাবের ভয়ে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তাই তিনি আদালতে এ মামলা করছেন। আশা করছেন, তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
ইসমাইল হোসেনের পরিবার এতদিন মনে করতেন, কথিত আয়নাঘরে ইসমাইলকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাই আওয়ামী সরকারের পতনের পর আয়নাঘর থেকে কেউ কেউ ফিরে এলে ইসমাইল হোসেনের ছোট ভাই ইউসুফ আলীও ঢাকায় ছুটে যান। গুমের শিকার অন্যদের স্বজনদের সঙ্গে তিনি কয়েক দিন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করেন কথিত আয়নাঘরের সামনে। ইসমাইলের ছোট দুই সন্তানও অপেক্ষায় থাকেন বাবার; কিন্তু ইসমাইলকে ছাড়াই বাড়ি ফিরতে হয়েছে ইউসুফকে। এরপরই মামলার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারটি।