৭ বছরে শতকোটি টাকা, জেলা পরিষদ সদস্যই যেন তার আলাদিনের চেরাগ
মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বান্দরবান
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৫৯ পিএম
সাত বছর আগেও বান্দরবান কাঠ ব্যবসায়ীর সমিতির ভবনে ভাড়ায় থাকতেন তিনি। ২০১৭ সালে জেলা পরিষদ সদস্য হয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলেন। ৭ বছরে হয়ে গেলেন শতকোটিরও বেশি টাকার মালিক। গড়েছেন গাড়ি বাড়ি। বনে যায় শত শত একর জায়গার মালিক। বলছি বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুরের কথা।
মোজাম্মেল হক বাহাদুর এবং তার ভাইয়েরা মিলে টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো অনিয়ম নাই তারা করেনি। জায়গা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে বাহাদুর ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে। বাহাদুরের ৭ বছরে শূন্য থেকে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া বাংলা সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে বলে জানায় বান্দরবানের সচেতন মহল।
তার বাবা ছিলেন একজন দর্জি। তার পূর্ববাড়ি হচ্ছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নে। বাবার দর্জির কাজ করার সুবাদে বান্দরবানে তাদের আগমন। পরে ছাত্র-রাজনীতি থেকে উঠে ঠিকাদারি শুরু করেন তিনি; কিন্তু ঠিকাদারিতে কোনো সুবিধা করতে পারেনি বাহাদুর। পরে জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর হয়ে গেলেন আঙুল ফুলে কলাগাছ।
সাত বছরে যত অর্জন তার
সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান পৌরশহরে ৬ কোটি টাকা মূল্যের জায়গা কিনে ১০ কোটি টাকা খরচ করে ৬ তলা বিশিষ্ট ব্যয়বহুল ভবন নির্মাণ করেছে বছর দুয়েক আগে। তার ৬ তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তম ফ্লোরের কোনো অনুমোদনও নাই।
বান্দরবান সদর ইউনিয়নের টঙ্কাবতী সড়কে প্রতি একর ২০ লাখ টাকা করে ৩শ একর জায়গা কিনেছেন তার নামে। তার ভাইদের নামে যে জায়গাগুলো কিনেছেন তার মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের ওয়াসার মোড় এলাকায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে ২ হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্লোর কিনে গড়েছেন ব্যয়বহুল বাহাদুর টেইলার্স এন্ড ফেব্রিক্স।
তাছাড়াও মোটা অংকের বিনিময়ে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শেয়ার কিনে ট্রাস্টি বডির সদস্য হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তার এই অর্থ আয়ের উৎস হচ্ছে জেলা পরিষদ সদস্য। জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদসহ জেলার অন্যান্য সরকারি ডিপার্টমেন্টের সব প্রকল্পের কাজ সে টেন্ডারে অনিয়মের মাধ্যমে দখল করে নেয়। অনেক সময় টেন্ডারও করেত দেয় না। তার মুখের কথাই নাকি টেন্ডার। তাছাড়াও বিভিন্ন মানুষকে কাজ পাইয়ে দিয়েও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বাহাদুরের জায়গা দখলের গল্প
রাঙ্গামাটি তথ্য অফিসের এক কর্মচারী জামাল উদ্দিন। তার বাড়ি হচ্ছে বান্দরবানে। জামাল ও তার ভাইয়েরা জানায়, বান্দরবান পৌর শহরে অবস্থিত ব্রিটিশ আমল থেকে দখলীয় বাপ-দাদার দিনের সম্পত্তিটুকুও কেড়ে নিয়েছে বাহাদুর। পরে জায়গাটা তার মেয়ের জামাই কাউছার সোহাগ ও তার ভাই রুবেলকে ভাগ করে দিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, বাহাদুর জেলা পরিষদ সদস্য হওয়ার পর তার গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়া থেকে তার সব আত্মীয় স্বজনকে বান্দরবানে নিয়ে আসে। তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সবাই তারা আজ শত কোটির মালিক।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর বলেন, ৬ তলা ভবনটি আমার। বাহাদুর টেইলার্সে আমিসহ ৪ জন শেয়ার রয়েছে।
অল্পদিনে শত কোটি টাকার মালিক কিভাবে হলেন জিজ্ঞেস করা হলে- এত কথা বলার সময় নাই বলে ফোন কেটে দেন।
মোজাম্মেল হক বাহাদুর বর্তমানে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন বলেন, তিনি বান্দরবানে নাই। কোথায় আছে সেটাও জানেন না।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১১ মে দৈনিক যুগান্তরের ‘বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেন পারিবারিক সম্পত্তি’ শিরোনামে তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে প্রায় শতকোটি টাকার দুর্নীতির বিষয় উঠে আসে এবং পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কনভেনার থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।