Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিএনপি নেতা মিজান

আওয়ামী জমানায় অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক, পটপরিবর্তনেও পোয়াবারো অবস্থা তার

Icon

রাজশাহী ব্যুরো 

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৩ পিএম

আওয়ামী জমানায় অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক, পটপরিবর্তনেও পোয়াবারো অবস্থা তার

মিজানুর রহমান মিজান

রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান। বিএনপি নেতা হলেও দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ‘আঁতাত’ করে চলেছেন। তার বাবা এক সময় ছিলেন ফুটপাতের হোটেল ব্যবসায়ী। কিন্তু আওয়ামী জমানায় মিজান ফুলেফেঁপে হয়েছেন অঢেল বিত্ত ও বৈভবের মালিক। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার আরও পোয়াবারো অবস্থা।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চার শতাধিক গভীর নলকূপের দখল নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। এছাড়া তানোর উপজেলাজুড়ে তিনি পুকুর দখলে নেমেছেন। ডিশ কন্ট্রোল রুমে ভাঙচুর করে লুটে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকার মালামাল। অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মিজানকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, গত দেড় যুগে তাদের নেতাকর্মীরা নিঃস্ব হয়েছেন। আর মিজান কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, মিজানের এসব কর্মকাণ্ডে তানোরে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই এখনই তার লাগাম টানার সময়। আর তা না হলে দল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব ঘটনায় মিজানের বিরুদ্ধে শক্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

১৮ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেওয়া অভিযোগে নেতাকর্মীরা বলেছেন, মিজান ২০০৯ সালের আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। এ সময় তার বাবা আবুল হোসেন ফুটপাতে বসে ভাতের ব্যবসা করতেন। ২০১০ সালে আপন মামা প্রয়াত বিএনপি নেতা এমরান মোল্লার মাধ্যমে উপজেলা যুবদলের সভাপতির পদ দখল করেন মিজান। ২০১৬ সালে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ১৩ ভোট বেশি পেয়ে তানোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।

এরপর থেকে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার আগ পর্যন্ত মিজান আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘আঁতাত’ করে চলেছেন। এলাকার আওয়ামী লীগের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তার ছিল গোপন সখ্য। ফলে তিনি ঝামেলামুক্তভাবে পাঁচ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তিনি কোনো উন্নয়ন না করে নিজের আখের গুছিয়েছেন। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।

পাশাপাশি বোন, ছোট ভাই, ভগ্নিপতি, ভাইয়ের ছেলে এবং তার স্ত্রীর চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ১৫ বছরে যেখানে নিঃস্ব হয়েছেন, সেখানে মিজান কিনেছেন ২৫ বিঘা জমি। রাজশাহী শহরে নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। সম্প্রতি তিনি ৭০ লাখ টাকা দিয়ে টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি হ্যারিয়ার গাড়ি কিনেছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, মিজানের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে পছন্দ করেন না। তাই ২০২১ সালে তানোর পৌর নির্বাচনে তিনি আবারও প্রার্থী হলেও শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তিনি নিজের ভোটকেন্দ্রেই মাত্র ৩০০ ভোট পান। ভোটে হেরে গিয়ে মিজান বলেছিলেন, ‘নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। মানুষ উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দিয়েছেন।’

মিজানের এই বক্তব্যের পর দলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সবসময় আঁতাত করে চলা মিজান সরকার পতনের পর এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সরকার পতনের পর মিজানের অনুসারীরা বিএমডিএ’র চার শতাধিক গভীর নলকূপে তালা মেরে দখলে নিয়েছেন। গভীর নলকূপ নিয়ে শুরু করেছেন চাঁদাবাজি। পাঁচন্দর ইউনিয়নের যশপুর ও বিনোদপুর গ্রামে প্রায় ৮-৯টি পুকুর দখল করে মাছ ছেড়েছেন। এর আগে মিজান জিয়া পরিষদের জায়গা দখলে নিয়েও তিনতলা বিলাসবহল ভবন করেছেন।

গত ১০ আগস্ট মিজানের বিরুদ্ধে কলমা ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন রুহুল কবীর রিজভীর কাছে। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, মিজান এলাকায় ডিশের ব্যবসা করেন। কলমা ইউনিয়নে মিজান ও তার লোকজন গত ৮ আগস্ট কলমার চোরখৈর গ্রামের ডিশ ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদের কন্ট্রোল রুমে হামলার পর লুট করেছেন।

তানোর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী জানান, মিজানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগের কথা তিনি শুনেছেন। যেসব অভিযোগ আসছে তা নিয়ে তারা বিব্রত। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন জানান, তিনিও মুখে মুখে এসব অভিযোগ শুনেছেন। তবে কেন্দ্রে অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানেন না।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিজান বলেন, কেন্দ্রে অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত নই। বরং যারা এগুলো করছেন তাদের থামানোর চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধভাবে সম্পদশালী হওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই ডিশের ব্যবসা করি। সেখান থেকেই বৈধ উপায়ে আয় করেছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী জমি দখল, বাড়িঘরে হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। যারাই এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে যেন আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাংবাদিকরাও যেন সব সত্য কথা তুলে ধরেন। আমি কোনো অপকর্ম করলে আমাকেও যেন ছাড় দেওয়া না হয়।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম