চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে মৌসুমের টানা ভারি বর্ষণে নগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের কোথাও বুক সমান, কোথাও আবার গলা সমান পানি জমে যায়। মানুষের বাসা-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকেছে পানি। নগরীর অলি-গলির এবং প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত হয় পানি। এতে কোনো কোনো সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসের সর্তকতা জারি করা হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে তুমুল বর্ষণ শুরু হয়। এ বর্ষণ থেমে থেমে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে। একটানা বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরের কয়েকটি এলাকা, রহমতগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজার সংলগ্ন এলাকা, বাকলিয়া ডিসি রোড, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যায়। নগরীর প্রধান সড়কের মুরাদপুর ও দুই নম্বর গেট এলাকায় কোমর সমান পানি উঠে। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা পড়েন বিপাকে। যানবাহন চলাচল করতে না পারায় অনেকে বুক সমান পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছেন। অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছে প্যাডেলচালিত রিকশা। পানিতে ডুবে যায় দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অনেক বাসাবাড়ির নিচতলা।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়। দুপুরের পর পানি নামতে শুরু করে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় বিকালের পর অনেক স্থানে পানি নেমে যেতে দেখা গেছে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার কারণে এবারের বর্ষায় নগরীতে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে না। বৃষ্টি থামলেই পানি নামতে শুরু করে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, সকালে বৃষ্টি কম হওয়ায় বাসা থেকে বের হয়েছিলাম কিন্তু বেলা বাড়ার পর টানা বৃষ্টিতে সড়কে পানি উঠে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে যেখানেই গেছি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রিকশা ভাড়াও দ্বিগুণ দিতে হয়েছে। তবে এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৩৬টি খাল ঘিরে নেওয়া প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরো ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ শতাংশ।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এই তিন ঘণ্টায় ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৭৬ মিলিমিটার।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে দিনের প্রথম জোয়ার শুরু হয়। আর দ্বিতীয় ভাটা শুরু হয় বেলা ১টা ৩ মিনিটে। অর্থাৎ যখন ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন ছিল ভরা জোয়ারের সময়। ভাটার সময় শুরুর পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করে।
পতেঙ্গা আবহওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বছরের এ সময়ে লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। এখনো লঘুচাপের প্রভাবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময়ে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।