কেঁচো সার উৎপাদনে ভাগ্য ফিরেছে গোয়ালন্দের গৃহবধূ জাসমার
শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কেঁচো দিয়ে জৈবসার (ভার্মি কম্পোস্ট সার) তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন গৃহবধূ জাসমা খাতুন। এতে তার সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। পেয়েছেন সেরা কৃষি উদ্যোক্তার পুরস্কার। তার উৎপাদিত স্বল্পমূল্যের গুণগত মানসম্মত সারের চাহিদা এলাকায় ব্যাপক। ফসল উৎপাদন ছাড়াও তার এ সার ব্যবহৃত হচ্ছে মৎস্য খামারেও।
উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নবু ওছিমদ্দিনপাড়ায় তার বাড়ি। স্বামী মাহাবুবুল আজম ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। সংসারে তাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।
আলাপকালে জাসমা আক্তার জানান, ফরিদপুরে তার এক বান্ধবীর খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ২০২২ সালে মাত্র ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে শুরু করেন তার প্রকল্প। প্রথম দিকে মাসে ১০-১২ কেজি জৈবসার উৎপাদন করতে পারতেন।
এজন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করতেন গোবর। তা থেকে প্রথমে চাকের মধ্যে কম্পোস্ট সার তৈরি করতেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি প্রতি মাসে ৮-৯ মণ জৈবসার প্রস্তুত করে থাকেন। প্রতি কেজি সার পাইকারি পর্যায়ে ১০-১২ টাকা এবং খুচরো পর্যায়ে ১৪-১৫ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।
জৈবসার উৎপাদনে তিনি নিজ খামারের দুটি গরুর গোবর এবং আশপাশ হতে সংগৃহীত গোবর ব্যবহার করে থাকেন।
এই সার উৎপাদন করে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে শ্রেষ্ঠ কৃষি উদ্যোক্তার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন জাসমার খামারে। তারা বলেন, এখানে কাজ করে তারা সংসার চালাচ্ছেন। জাসমা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।
জাসমা আক্তার জানান, তার উৎপাদিত সার স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরও বাইরে বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া তারা আমাকে খামার বৃদ্ধির জন্য টিন, ইট ও জৈবসার ছাকনির জন্য সরকারিভাবে অনুদান হিসেবে একটি ছাকনি যন্ত্র দিয়েছেন। তবে এ অনুদান খুবই কম। নিজের অর্থ দিয়ে খামার পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার যদি আমাকে আরও অনুদান বা সহযোগিতা করত, তাহলে আরও বৃহৎ পরিসরে খামারটি পরিচালনা করতে পারতাম। সৃষ্টি হতো আরও কর্মসংস্থানের।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুনর রশিদ, শামসুল হক, আকমল হোসেনসহ কয়েকজন জানান, জাসমার উৎপাদিত জৈবসার তারা তাদের ফসলি জমি ও মৎস্য খামারে ব্যবহার করে বেশ উপকৃত হচ্ছেন। এর ব্যয় কম, কার্যকারিতা বেশি। কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনুজ্জামান বলেন, জাসমার খামারের উৎপাদিত জৈবসারের গুণগতমান অনেক ভালো। কৃষকরা এই সার ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হচ্ছেন। আমি মাঝে মধ্যেই খামারটি পরিদর্শন করে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। ইতোমধ্যে তার খামার বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। তাকে আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।