পঞ্চায়েতের দেওয়া তালা ভেঙে ঘর বুঝিয়ে দিল সেনাবাহিনী
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৬ পিএম
বড়লেখায় স্বামী অন্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে প্রথম স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে বসতঘর থেকে তাড়িয়ে দরজায় তালা দেয় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি, সম্পাদকসহ গ্রাম্য মাতবররা। অবশেষে সেনাবাহিনী রোববার বিকালে তালা ভেঙে তাদের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার লক্ষীছড়া চা বাগানের নিয়মিত শ্রমিক সাগর ভুমিজ প্রায় ১৮ বছর আগে সারদা ভুমিজকে বিয়ে করে কাটাজঙ্গল এলাকায় নিজেদের বসত বাড়িতে বসবাস করছেন। তারা নিঃসন্তান হওয়ায় সাগর ভুমিজ প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গ্রামের সম্বারি ভুমিজ টুনি (২৫) নামে এক মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর সাগর ভুমিজের প্রথম স্ত্রী সারদা ভুমিজ একাই নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
এদিকে সাগর ভুমিজ গ্রামের অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি রাজেন্দ্র সিং ভুমিজ, সেক্রেটারি মাখন সিং ভুমিজ, মাতবর দীলিপ সিং ভুমিজ, মিলন সিং ভুমিজ, মিনু সিং ভুমিজ প্রমুখ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সারদা ভুমিজকে গত ৩০ জুন শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে টেনেহিঁচড়ে বসতঘর থেকে বের করে ঘরে তালা দিয়ে দেয়। তারা হুমকি দেয় এই বাড়িতে থাকতে হলে তাদের ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। গ্রামের আশপাশ এলাকায় দেখা গেলে তিনজনকেই মেরে ফেলবে। তাদের ভয়ে দেড় মাসের অধিক সময় সারদা ভুমিজ, স্বামী সাগর ভুমিজ ও সতিন সম্বারী ভুমিজ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে থাকেন।
অবশেষে ভুক্তভোগী সারদা ভুমিজ, তার স্বামী সাগর ভুমিজ ও সতিন সম্বারী ভুমিজ শনিবার সন্ধ্যায় সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেন। ওই রাতেই সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আতিক তাদের নিয়ে লক্ষীছড়া বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে যান এবং দ্রুত তাদের বসতঘর বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এ সময় খোঁজ করেও অভিযুক্তদের পায়নি সেনাবাহিনী। পরদিন রোববার পর্যন্ত বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিকালে সেনাবাহিনী সরেজমিন গিয়ে তালা ভেঙে তাদের ঘরে তুলে দিয়েছে।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন গেলে ভুক্তভোগী সারদা ভুমিজ জানান, আমার স্বামী একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ওই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে আমাদের কারো কোনো আপত্তি ছিল না কিন্তু পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সেক্রেটারি তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে অন্যায়ভাবে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে ঘরে তালা দিয়েছেন।
পঞ্চায়েতের নেতারা বলেছে, এই ঘরে থাকতে হলে তাদের ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কোথাও বিচার পাইনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। দেড় মাস পালিয়ে থাকার পর অবশেষে সেনাবাহিনীর কাছে যাওয়ায় তারা আমাদের ঘর ফিরিয়ে দিয়েছে।