Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘একটা ছেলে প্রতিবন্ধী, আরেকটি ছেলে কোটা আন্দোলনে গিয়ে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে’

Icon

মোহাম্মদ নান্নু মৃধা, ডামুড্যা (শরীয়তপুর)

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম

‘একটা ছেলে প্রতিবন্ধী, আরেকটি ছেলে কোটা আন্দোলনে গিয়ে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে’

পারিবারিক পিছুটান উপেক্ষা করে দোকান কর্মচারী মবিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। 

প্রতিবন্ধী এক ভাইকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান তার বাবা। ঢাকার উত্তরা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারানোর পর উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এখন পথে বসেছে মবিনের পরিবার। 

চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৩-৪ লাখ টাকা হলে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ফিরে পাবেন মবিন। দেশের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে অসহায় হয়ে পড়া মবিন এখন দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ টাকা না হলে তার পরিবারকে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। 

শনিবার ডামুড্যার বড় শিধলকুড়া গ্রামে গিয়ে মবিনের (১৭) পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাল। 

এরপর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে পরলে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন। খেয়ে না খেয়ে বেশ চলছিল প্রতিবন্ধী ভাই জুলহাস, মা নাজমা বেগম ও মবিনের সংসার। গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো মবিন রাজধানী ঢাকার উত্তরার রাজল²ীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। পারিবারিক পিছুটানসহ সব কিছু ভুলে মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। এরপর মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান কানের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। 

পাশাপাশি পুলিশের ছোড়া ছড়রা গুলিতে তার চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর মবিনের মিছিলের সঙ্গীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করলেও এখনো মবিনের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। টাকার অভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় এখন তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন। 

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘মবিনের বাবা মারা যাওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় আল্লাহ আমার এ কি করল? আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। ওই এক ছেলেকে নিয়েই আমার হিমশিম খেতে হয়। এখন আবার আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে। আমি দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? দেশবাসী যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন, তাহলে আমি বাঁচতে পারতাম। নয়তো আমার কী হবে? আমি সাহায্য চাই।’
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম