‘তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও, আমার পেটে ৯ মাসের সন্তান আছে’
মামুনুর রশিদ মামুন, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪০ পিএম
নিহত জিন্নাতুল ইসলাম খোকন।
বিবেকের তাড়নায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বালুর লেবার জিন্নাতুল ইসলাম খোকন (২৫)। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগে স্ত্রী ও মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন খোকন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ মুহূর্তে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গাজীপুরের বাসন থানার সামনে খোকন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে চরম বিপাকে নিহতের পরিবার। এদিকে খোকনের স্ত্রী রানী আক্তার এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা
জানা গেছে, কেন্দুয়ার ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে জিন্নাতুল ইসলাম খোকন। নিহত খোকনের মা চম্পা আক্তার বলেন, খোকনের বাবা মারা যান প্রায় এক বছর হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী তিনি।
তারা সপরিবারে গাজীপুরের নাউজুর হোসেন মার্কেট এলাকায় বসবাস করতেন। খোকন বালুর গাড়িতে লেবারের কাজ করত। আন্দোলন শুরু হলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এ সুযোগে প্রতিদিন সে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তাকে নিষেধ করেও আন্দোলনে যেতে দমাতে পারেননি। ৫ আগস্ট দুপুরে আন্দোলনকারীরা তাদেরকে ফোন দিয়ে জানান, খোকন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং জয়দেবপুর সদর হাসপাতালে আছেন। খবর পেয়ে তারা দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ওইদিন রাত ১০টার দিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে। খোকনের পেটে ও কোমরে দুটি বুলেটের চিহ্ন ছিল। পরদিন কেন্দুয়ার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
নিহত খোকন প্রায় এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার বীর আহম্মদপুর গ্রামের রাশিদ মেম্বারের মেয়ে রানী আক্তারকে বিয়ে করেন। এদিকে স্বামীকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রানী আক্তার।
তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কাউকে পেলেই কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও। আমার পেটে ৯ মাসের সন্তান আছে। আমি সন্তানকে কী জবাব দেব। আমার সন্তান পেটে থেকেই এতিম হয়ে গেল।’