কুমিল্লায় কর্মকর্তাদের কৌশলে সুরক্ষিত ছিল ৫ থানা
কুমিল্লা ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪০ পিএম
কুমিল্লায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কৌশলে সুরক্ষিত ছিল ৫টি থানা এবং পুলিশ। সদ্য সমাপ্ত গণঅভ্যুত্থানে জেলার অধিকাংশ থানা এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু জেলার গুরুত্বপূর্ণ কোতয়ালি মডেল থানা, মুরাদনগর, বাঙ্গরা বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং থানা ছিল সুরক্ষিত।
এসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনার কারণেই থানাগুলো হামলার টার্গেট থেকে বেঁচে যায় বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাস চন্দ্রধর কৌশলে তিন থানার শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হামলার কবল থেকে উদ্ধার করেন।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কুমিল্লার বেশিরভাগ থানা এবং পুলিশ লাইন দুর্বৃত্তদের হামলার টার্গেটে পরিণত হয়। কিন্তু কয়েকটি থানার ওসিদের নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে তাদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ওই উত্তপ্ত সময়ে কুমিল্লা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কোতয়ালি থানায় এবং পুলিশের ওপর কোনো ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। থানার ওসি ফিরোজ হোসেন ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এই থানায় যোগদানের পর অতিউৎসাহী হয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি করেনি। সব রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
সদ্য সমাপ্ত গণঅভ্যুত্থানেও ওসি ফিরোজের ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। এতে সরকার পতনের পর এ থানায় কোনো ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। থানার সব পুলিশ সদস্যরাও ছিল একেবারেই সুরক্ষিত। তাছাড়া এ থানায় কিছুদিন সেবা বন্ধ থাকলেও সব পুলিশ সদস্যরা থানাতেই অবস্থান করেছেন। সরকার পতনের পর বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মী এবং বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত কোতয়ালি মডেল থানায় যাতায়াত করছেন।
এদিকে জেলার মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাস চন্দ্রধর দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এতে সংকট মুহূর্তে মুরাদনগর থানা হয়ে ওঠে আশপাশের কয়েকটি থানা পুলিশের আশ্রয় কেন্দ্র। পাশের দেবিদ্বার থানায় ভাঙচুর এবং আক্রমণ করা হলে ওই থানার ওসিসহ সব পুলিশ সদস্যরা মুরাদনগর থানায় এসে আশ্রয় নেয়। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করলে পুলিশের এক সদস্য নিহত হন। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাস চন্দ্রধর ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই হাইওয়ে থানা পুলিশের ২৮ সদস্যকে উদ্ধার করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসেন।
একই সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার ৯ পুলিশ সদস্যকে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মুরাদনগর থানায় আশ্রয় দেন। ওসির নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে মুরাদনগর থানা সুরক্ষিত ছিল। ওসি প্রভাস দেবিদ্বার, চৌদ্দগ্রাম এবং ইলিয়টগঞ্জ থানার শতাধিক পুলিশ সদস্যকে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে উদ্ধার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
চরম সংকটে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের সহায়তা নিয়ে নিজ থানাকে সুরক্ষিত রেখেছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার পেশাদারিত্বের প্রশংসা করছেন সকল শ্রেণি পেশার লোকজন।
অন্যদিকে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মো. শফিউল আলমের ভূমিকাও ছিল নিরপেক্ষ। তিনি জনসাধারণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি এসএম আতিকুল্লাহ যোগদানের পর থেকেই পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই সরকার পতনের পর স্থানীয় জনসাধারণ এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা এসে ওই থানার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। সংকটকালীন সময়ে জেলার বুড়িচং থানায়ও কোন আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। ওসি আবুল হাসনাত সকল পুলিশ সদস্যদেরকে নিয়ে নিজ থানাই অবস্থান করছিলেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন পেশাদারীত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই সংকটকালীন সময়ে আমরা কোতোয়ালি থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুরাদনগর উপজেলার দায়িত্বশীল নেতা আশিকুর রহমান বলেন, ওসি প্রভাস চন্দ্রধর একজন দল নিরপেক্ষ কর্মকর্তা। তিনি সংকটকালীন সময়ে ছাত্র জনতার পাশে ছিলেন। কোনো ধরনের হয়রানি করেননি। তাই এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তা মানুষের জন্য প্রয়োজন।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাস চন্দ্র ধর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন। তাই আমাদের নেতা সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের নির্দেশে আমরা মুরাদনগর এবং বাঙ্গরা বাজার থানার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি।
এদিকে থানার ওসিদের নিরপেক্ষ ভূমিকার যে সুফল রয়েছে এর দৃষ্টান্ত কুমিল্লার উল্লিখিত থানাগুলো। তাই পুলিশ সদস্যদেরকে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহলের ব্যক্তিরা।