ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তরা ঢাকার ধামরাইয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের এগ্রো খামার, গাজীপুরে দুটি মার্কেট এবং বগুড়ার সোনাতলায় একটি রাইস মিল ও আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের চৌটাইল এলাকায় ঢাকা-১৫ (মিরপুর) আসনের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন মজুমদার এগ্রো খামারে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সোমবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারসহ এমপি-মন্ত্রীরা গাঢাকা দেন। এ খবরের পরই মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে কামাল মজুমদারের মালিকানাধীন এগ্রো খামারে শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে লুটতরাজ চালায়।
এ সময় তারা ২২০টি হরিণ, ৭০৫টি গরু, তিন শতাধিক ছাগল, ২২টি বনগরু, তিন সহস্রাধিক হাঁস, শতাধিক ময়ূর, দেড় কোটি টাকা মূল্যের মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
সোমবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত তারা এই লুটপাট চালায়। মজুমদার এগ্রো খামারের ম্যানেজার স্বপন মজুমদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
গাজীপুরে মার্কেটে লুটপাট: শুক্রবার সকালে মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় ৫০-৬০ জনের একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একতা মার্কেটে হামলা চালায়।
হামলাকারীরা মার্কেটের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ সময় বাধা দিলে ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির লোকজনের ওপরও হামলা চালানো হয়।
মার্কেটের ব্যবসায়ী ইলিয়াস মিয়া বলেন, হামলাকারীরা মার্কেটের শতাধিক দোকানে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। হামলায় ব্যবসায়ী সোহাগ আলী, আসমা সুলতানা, গফুর তালুকদার, শেখ কাউসার আহত হন।
একই দিন রাতে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে রাস্তার পাশে তারকা মার্কেটে একদল লোক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, ব্যবসায়ীদের মারধর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ করেন মার্কেটের মালিক অ্যাডভোকেট দিলারা সুলতানা সেতু। মার্কেটসংলগ্ন তার বাসভবন হওয়ায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।
বগুড়ায় রাইস মিল ও আ.লীগ নেতাদের বাড়িতে লুটপাট: বগুড়ার সোনাতলায় সৈয়দ আহম্মদ কলেজ স্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তরা পার্বতী সেমি অটোরাইস প্রসেসিং সাটার মিলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
দুর্বৃত্তরা মিল থেকে ১৫৭ মেট্রিক টন চাল, ৮০ টন খুদ, ১৫০ টন ধান, ৩০ টন গুঁড়া, ৫৫ টন চালের ব্যান্ড (চালের কুঁড়া), দুই হাজার পিস বস্তা, ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এরপর তারা মিলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
৫ আগস্ট দুপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত এ হামলা চলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী নিরাঞ্জন চন্দ্র শনিবার সোনাতলা থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটনসহ শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং আগুন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ওসি বাবু কুমার সাহা জানান, অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে।
অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লিটন অভিযোগ করেন, দুর্বৃত্তরা সোনাতলা উপজেলা পরিষদের নতুন বাংলোতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তার আগুনিয়াতাইড় মাস্টারপাড়া ও পাতিলাকুড়া গ্রামে তার পৈতৃক বাড়িঘরে তাণ্ডব চালিয়েছে। তিন দিন ধরে তাদের সব পুকুর থেকে মাছ লুট করা হয়।
নতুন বন্দর এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবীন আনোয়ার কমরেড, ভাই পৌর কাউন্সিলর নিপুণ আনোয়ার কাজলের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হরিখালী বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অসীম কুমার জৈন নতুনের বাড়িঘর, গড়ফতেপুর এলাকায় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিস্টারের বাড়িঘরে আগুন, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়; শতাধিক সমর্থকের বাড়িঘরেও তাণ্ডব চালানো হয়। হামলার ভয়ে অনেক নেতাকর্মী বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে গেছেন। সোনাতলা প্রেস ক্লাবেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।