শহিদ হওয়ার আগে সজল মাকে বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তোমার পাশে থাকবে’
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১৫ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন সজল। গত ৫ আগস্ট গুলি করে হত্যার পর তার লাশ গুম করার জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। সে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল।
পুলিশের গুলিতে শহিদ হওয়ার ঠিক আগে মায়ের সঙ্গে মুটোফোনে শেষ কথা হয় সজলের। তখন সে জানায় ‘মা আমি যদি শহিদ হয়ে যাই তুমি আমার লাশটি নিয়ে এসো। আমার বিশ্বাস আমি শহিদ হলে হাজারো শিক্ষার্থী তোমার পাশে দাঁড়াবে।’
ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা শেষ হওয়ার পর ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ে মা শাহিনা বেগম ও বাবা খলিলুর রহমান। ছেলের সন্ধানে বেরিয়ে যান তারা। কিন্তু ছেলেকে আর জীবিত পাননি, পেয়েছেন মৃত। তাও আবার পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া অবস্থায়। সন্তানের এমন লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা বাবা ও বোন। তাদের কান্না কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এমনভাবে ছেলের লাশ দেখতে হবে তারা কখনও ভাবেননি।
মা শাহিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ১ দফা দাবিতে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। তারা আমার ছেলের লাশ গুম করার জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। আমার ছেলের মোবাইলে সর্বশেষ কথা হলে, সে আমায় বলে ‘মা আমি মরে গেলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তোমার পাশে দাঁড়াবে।’
সজলের মা আরও জানান, সজল আমাদের একমাত্র ছেলে। আমরা এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার জামগড়ায় জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাব। সে আশায় তাকে আশুলিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসিতে ভর্তি করাই। সে ১ম বর্ষের ২য় সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
ঘটনার ২দিন পর গত মঙ্গলবার সিটি ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ড দেখে সজলের পোড়া লাশ সনাক্ত করে পরিবার। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল স্যালুট জানিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার লাশ হস্তান্তর করে। গত বুধবার তার গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হয়।