স্বামীকে হারিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাকরুদ্ধ স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। ছবি-যুগান্তর
গার্মেন্টস কর্মী স্বামীর মৃত্যুতে আক্ষেপের শেষ নেই স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের। সংসারের বাজার করতে বেরিয়ে ঘাতকের এক গুলিতেই মৃত্যু হয় ফজলুর রহমানের (২৮)। স্বামীর মৃত্যুতে একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সুরাইয়া।
তাদের ছয় বছরের শিশু ফারজানা। সবে মাত্র নার্সারিতে পড়ে। এখনও জানেনা তার বাবা আর ফিরে আসবেনা। মার কাছে জানতে চায় বাবা কখন ফিরবে। মেয়ের এমন আকুতিতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা সুরাইয়া বেগম। ছোট্ট মেয়েকে কীভাবে শান্তনা দিবেন এমন ভাষা তার মুখে নাই। নিহত ফজলুর রহমানের বাড়ি শশীভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নে।
বৃহস্পতিবার ফজলুর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, শিশু কন্যা ফারজানাকে কোলে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন স্বামীর শোকে কাতর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। মায়ের কোলে ও পাশে বসে শিশু ফারজানা বারবার মায়ের কাছে জানতে চায়, বাবা কহন আইবো গো মা। নির্বাক মা সুরাইয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন মেয়ের মুখের দিকে। শিশু মেয়েকে শান্তনা দেয়ার মতো কোন ভাষাই যেন নেই তার। পাশে বসে ছেলের জন্য বিলাপ করছেন মা সালেহা বেগম। ছেলের কথা বলতে বলতেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পরেন।
নিহত ফজলুরহমান চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের আটকপাট গ্রামের আমিনুল হকের ছেলে। ৮ ভাই বোনের মধ্যে ফজলুরহমান তৃতীয়। বাবা তরকারি বিক্রেতা আমিনুল হক ১০ বছর আগে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে এক টুকরো আবাদি জমি বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। পরে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান ফজলুর রহমান।
ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে কর্মী হিসেবে কাজ নেন। মিরপুরের কাজী পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে বলেছিলেন এক টুকরো জমি কিনে একটা নতুন ঘর করবেন। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টাকায় সংসারের বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকার মিরপুর ১৩ নম্বর এলাকায় মন্দিরের কাছে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
খবর পেয়ে তার বোনের জামাতা সাইদুর রহমান তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই রাত ৮ টায় তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা রাতেই নিহত ফজলুর রহমানের মরদেহ শশীভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে মঙ্গলবার বিকালে তার বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এসময় তার স্বজনদের অন্তহীন আহাজারিতে কাঁদে প্রতিবেশীরাও।
শশীভূষণ থানার ওসি ম এনামুল হক জানান, তার মরদেহ স্বজনরা ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। মরদেহ তার গ্রামেই দাফন করা হয়েছে।