লক্ষ্মীপুরের ৪ এমপি আত্মগোপনে, পদধারীরাও উধাও
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
ফাইল ছবি
পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনের এমপিদের কোনো খবর নেই। তারা কোথায় আছেন কেউই জানেন না। তাদের মোবাইল ফোনেও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে তারাও গা-ঢাকা দিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারীরাও পলাতক।
এদিকে গত ৪ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে। গুলি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই দিন আন্দোলনকারীরা তার বাসায় আগুন লাগিয়ে দেয়। সেখান থেকে ২৫ জনকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জীবিত উদ্ধার করলেও খোঁজ নেই টিপুসহ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনের।
বুধবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন, রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
চেষ্টা চালিয়েও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাইফুল হাসান পলাশ, লক্ষ্মীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার বাবুল পাঠান, রায়পুর পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট, রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জামশেদ কবির বাকী বিল্লাহসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলনকে ঘিরে গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২ টার দিকে লক্ষ্মীপুরের মাদাম ব্রিজ-ঝুমুর এলাকায় শিক্ষার্থী-জনতা অবস্থান নেয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের গুলি করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের লোকজনের গুলিতে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয় শিক্ষার্থী আফনান পাটওয়ারী। সেখানে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা ঝুমুর-মাদাম ব্রিজ থেকে উত্তর তেমুহনীর দিকে পা বাড়ায়। পথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন ভূঁইয়া আজাদদের মালিকানাধীন রোজগার্ডেনের ভবনে ভাঙচুর করা হয়। পরে উত্তর তেমুহনী এলাকায় আসে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ আন্দোলনকারীদের দেখে পালিয়ে যায়।
এদিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের ৫ জন সিনিয়র নেতা জানান, শেখ হাসিনা ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভরসা; কিন্তু তিনি এভাবে চলে যাবেন বিশ্বাস করতে পারছি না। জেলা-উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও আত্মগোপনে রয়েছে। তারা কারো খোঁজ নিচ্ছে না।
জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইউছুফ পাটওয়ারী বলেন, আমি নিরাপদে আছি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের কারো সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। একবারের জন্যও তারা খোঁজ নেয়নি। আমি কখনো কারো ক্ষতি করিনি।
চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব বলেন, শারিরীকভাবে অসুস্থ। তবে নিরাপদে আছি। আমাদের থানা সভাপতি কাশেম চৌধুরী ভালো আছেন। জেলা সভাপতি পিংকু ঢাকায় আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আরাফাত বলেন, আমি ভালো আছি। আমার বাবা (জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান) ভালো আছেন। আমরা নিরাপদেই আছি।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, লক্ষ্মীপুরের ৪ এমপির কোনো খোঁজ খবর আমার জানা নেই। জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও শহর পরিষ্কার, সড়কে যান চলাচলে কাজ করছেন।