Logo
Logo
×

সারাদেশ

মোহনপুরে ওসি-এসিল্যান্ডের গাড়িসহ ২৫ যানবাহন ভস্মীভূত 

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০০ পিএম

মোহনপুরে ওসি-এসিল্যান্ডের গাড়িসহ ২৫ যানবাহন ভস্মীভূত 

ছবি: যুগান্তর

রাজশাহীর মোহনপুরে শিক্ষার্থী আন্দোলনের নামে রোববার দুপুরে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে একদল বহিরাগত। উপজেলা সদরে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে নজিরবিহীন এ তাণ্ডব। এ সময়ে বহিরাগতরা মোহনপুর থানা, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, সরকারি খাদ্য গুদাম ও থানা সংলগ্ন ১৫টি দোকানে আগুন দিয়েছে।

আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে মোহনপুর থানার দুটি পিকআপ, এসিল্যান্ডের একটি সরকারি গাড়ি ও থানার ভেতরে থাকা ২৫টি মোটরসাইকেল। পরে দমকল বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাজশাহী-৩ (মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ নজিরবিহীন তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে তারা কেউই ছাত্র নয়। পাশ্ববর্তী বাগমারা, মান্দা, আত্রাই, রানীনগরসহ আশেপাশের এলাকা থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে মোহনপুরে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে।

আসাদ বলেন, দুই ঘণ্টা ব্যাপী সহিংসতার পরও পুলিশ ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। আমরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ মানতে পারছি না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে একদল বহিরাগত ভটভটি, অটো রিকশা ও মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন দিক থেকে এসে মোহনপুর সরকারি কলেজের সামনে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের ওপর সশস্ত্র অবস্থান নেন। এ সময়ে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাঁশের লাঠি ও লোহার রড হাতে বহিরাগতরা প্রথমে মহাসড়ক সংলগ্ন মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘেরাও করে ব্যাপক ভাঙচুর করে ও পরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এদিকে পরে বহিরাগতরা মোহনপুর থানায় ঢুকে প্রথমে ওসির পিকআপ ও পুলিশের আরেকটি টহল পিকআপে আগুন ধরায়। থানার বাউন্ডারি লাগোয়া ১৪ থেকে ১৫টি দোকানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। থানার ভেতরে বিভিন্ন মামলার আলামত ও পুলিশ অফিসারদের ব্যবহৃত ১৫টি মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। 

এ সময় থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্য মুল ভবনের কলাপসিবল গেইট লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে অবস্থান গ্রহণ করেন। বহিরাগতরা তাণ্ডব চালিয়ে পরে ছুটে যায় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে অবস্থিত এসি ল্যান্ডের অফিসে। সেখানে অফিসের সামনে থাকা এসি ল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের একটি সরকারি গাড়িটিতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় তারা। 

বহিরাগতরা মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ভবনের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টা কালব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে বহিরাগতরা মহাসড়ক ধরে কেশরহাটের দিকে চলে যায়। পরে দমকল বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি এসে আগুন নেভানোর কাজ করেন।

মোহনপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হলেও পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা থানার ভেতরে গেইট লাগিয়ে অবস্থান করেন। এ সময়ে বহিরাগতরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি দেন। থানা ভবনের মুল ফটক ভাঙার চেষ্টা চালায়।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, তিন শতাধিক বহিরাগত রোববার সকাল থেকেই মোটরসাইকেল ও ভটভটিতে করে এসে মোহনপুর সরকারি কলেজের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু একজন পুলিশও থানা থেকে বের হননি। তাণ্ডব শেষ হলে জেলা পুলিশের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএইচএম এরশাদ আলী মোহনপুর থানায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এই বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হরিদাস মণ্ডল বলেন, হামলাকারীর থানার ভেতরের গ্যারেজে থাকা পুলিশের দু’টি পিকআপ ও থানা প্রাঙ্গণে থাকা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। সরকার খাদ্য গুদাম, আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে এসি ল্যান্ড ও ইউএনও অফিস। আমরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের  প্রক্রিয়ায় আছি। ওসি আরও বলেন, হামলাকারীরা ছাত্র বলে আমাদের মনে হয়নি। অধিকাংশই আসে হামলা করতে।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, খুবই খারাপ কিছু ঘটেছে। তাদের টার্গেট ছিল সরকারি স্থাপনায় হামলা করা। আমার অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমাদের এসি ল্যান্ডের গাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসি ল্যান্ড অফিসেও ভাঙচুর ও নথিপত্র তছনছ করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম