Logo
Logo
×

সারাদেশ

নবীনগরে ঋণের চাপে মা-মেয়ের আত্মহত্যা

Icon

নবীনগর দক্ষিণ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম

নবীনগরে ঋণের চাপে মা-মেয়ের আত্মহত্যা

ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সামাজিক অস্থিরতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে। গত রোববার নবীনগর সদরে একই পরিবারের চারজন ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার একদিন যেতে না যেতেই মঙ্গলবার মা-মেয়ে ঋণের চাপে পড়ে বিষাক্ত দ্রব্য খেয়ে (স্থানীয় ভাষায় কেড়ির বড়ি) মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার রাতে নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও কাঠালিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে ১০টার দিকে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে।
 
জানা যায়, উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মজিবুর রহমানের স্ত্রী নূরতারা বেগম (৫৫) বিভিন্ন সমিতি থেকে ক্ষুদ্রঋণ তুলেছিলেন এবং তার মেয়ে কাঠালিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী সবুজ মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার এনেছিলেন। মেয়ের টাকা-স্বর্ণালংকার দিতে না পারা ও সমিতির কিস্তির চাপে পরে মা-মেয়ে পরামর্শ করে তারা দু'জন কেড়ির বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করবে। পরামর্শ মোতাবেক মঙ্গলবার দুপুরে নাতিনের হাত দিয়ে কাঠালিয়া গ্রামে মেয়ের কাছে কেড়ির বড়ি পাঠিয়ে দেয় নূরতারা বেগম। ওই দিনই দুপুরে প্রথমে মা কেড়ির বড়ি খেয়ে মেয়েকে ফোনে জানালে মেয়েও কেড়ির বড়ি খেয়ে ফেলে। পরিবারের লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে ডাক্তার মা-মেয়েকে ওয়াশ করে কুমিল্লায় স্থানান্তর করেন। কুমিল্লা নেওয়ার পথে দুজনেই মারা যান। সোনিয়া আক্তার  অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং তার দুই মেয়ে রয়েছে।

সোনিয়া আক্তারের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, সকালে আম্মা আমাকে বলেছে, তোর নানি রাস্তায় আসবে তোকে ১ হাজার টাকা দিতে এবং সঙ্গে একটা ব্যাগ দিবে, কেউ যেন জানতে না পারে। আমি নানির কাছ থেকে টাকা ও ব্যাগ নিয়ে আসি। বাসায় যেতেই আম্মা আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমার ছোট বোন কান্না শুরু করে মজা খাওয়ার জন্য, বোনকে সঙ্গে দিয়ে আম্মা আমাকে দোকানে পাঠিয়ে দেয়। মজা কিনে বাসায় গিয়ে দেখি আম্মা দরজা বন্ধ করে আছে। আমি ডাকাডাকি করলেও দরজা না খোলায় আমি চিৎকার শুরু করলে সবাই এসে দরজা ভাঙে, তখন আম্মা বমি করতে ছিল, পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যান। 

নূরতারা বেগমের ছেলের বউ লিজা বেগম জানান, তার শাশুড়ি দুপুরে বাহির থেকে ঘরে এসে শুয়ে পড়ে এবং বিদেশে দুই ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পর বমি করতে থাকে, পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যান। 

মজিবুর রহমান বলেন, সকালে আমি কৃষিকাজে চলে গিয়েছিলাম, কাজ থেকে বিকালে বাড়িতে আসার পথে জানতে পারি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে কেড়ির বড়ি খাইছে, এ খবর শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সমিতি ও মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো ঋণ ছিল আমাদের পরিবারের। আমার দুই ছেলে বিদেশ রয়েছে, তারা তো টাকা পাঠাচ্ছে, তারপরও কেন আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে মরতে হবে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। 

নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার রাত ১০টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম