মেহেরপুরে ১৪শ গাছের ‘মৃত্যু পরোয়ানা জারি’
তোজাম্মেল আযম, মেহেরপুর
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:১০ পিএম
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর সড়কের দু’পাশের ১ হাজার ৪৪০ গাছের ছাল কেটে লাল রংয়ে ‘মৃত্যু পরোয়ানা জারি’ করেছে বনবিভাগ। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে ৬ কিলোমিটার রাস্তা ফোর লেনে এবং মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক সম্প্রসারণে এসব গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
সড়কের মালিক সওজ হলেও গাছের মালিক জেলা পরিষদ। সওজের এই গাছ কাটার সিদ্ধান্তে সওজ ও জেলা পরিষদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
সওজ বলছে জেলার উন্নয়ন প্রয়োজনে সড়ক সম্প্রসারণে গাছ কাটার বিকল্প নেই। অপরদিকে দিকে জেলা পরিষদ বলছেন বার বার গাছ কেটে বিরানভূমি করা যাবে না। আগে গাছের চারা রোপণ তারপরেই গাছ কাটাতে হবে।
শুধু সড়ক বিভাগের নয়, বিগত সময়ে জেলা পরিষদের অনেক গাছ কাটা পড়েছে বৈধ ও অবৈধভাবে। কয়েক বছর আগেও সড়কে ব্রিটিশ শাসনামলের বড় বড় মেহগনি, শিশু, কড়াই, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন গাছ ছিল যার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। মেহেরপুর কুষ্টিয়া সড়কে সেসব গাছের কোনো চিহ্ন নেই।
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শত বছরের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৮৭টি গাছ ২০১৬ সালে মেহেরপুর জেলা পরিষদ গোপন দরপত্রে ৪৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সে সময় ৮৭টি গাছের বদলে শতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করে। যা নিয়ে যুগান্তরে ২০ জুলাই ২০১৬ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।
এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক ফোর লেনে সম্প্রসারণ এবং মুজিবনগর সড়ক সম্প্রসারণে ২ হাজার ৭৮৬টি গাছে কুড়ালের কোপ শেষ হয়েছে। এসব গাছগুলো কাটার পর সড়কের পাশে গাছশূন্য সড়কে পরিণত হয়েছে।
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা ছায়াঢাকা সড়কে সরজমিনে দেখা গেল, সড়কের পাশে চায়ের দোকান। সেখানে ক্লান্ত পথিক একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। দোকানের নিকটবর্তীরা সেখানে বসে চা-পান করছেন। এসব গাছ কেটে ফেলা হবে শুনে তারা বিস্ময় হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছুদিন আগে শতবর্ষী গাছ কেটে নেওয়া হলো সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে বলে। এবার সড়ক সম্প্রসারণে গাছ কাটলে শসানে পরিণত হবে।
আমঝুপি গ্রামের নুর হোসেন নামের এক যুবক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন- ক’মাস আগেই তো সড়কের পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হলো। আবার নতুন করে গাছ কাটবে কেন? এই সড়কে নতুন করে কোন গাছ না লাগিয়ে প্রতিবছর শুধু গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে তো বিরানভূমিতে পরিণত হবে এলাকা।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম বলেন, এবার কোনোভাবেই গাছ কাটা যাবে না। এর আগে কেদারগঞ্জ-দর্শনা সড়কে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৫৯টি গাছ কাটার জন্য দাবি করে। সেই গাছের দাম নির্ধারণ করে দেয় বনবিভাগ ১৯ লাখ টাকা। যা আমরা দরপত্রের মাধ্যমে ৭৯ লাখ টাকায় বিক্রি করে রাজস্বখাতে জমা করেছি।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসটি হামিম হায়দার বলেন, বন বিভাগের দায়িত্ব গাছের রক্ষণা-বেক্ষণের। গাছ কাটার আগে গণনা করে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার দায়িত্বও বন বিভাগের। আমরা সেই কাজটিই করে দিয়েছি।
সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে কিছু ক্ষতি মেনে নিতেই হবে। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে কলেজ মোড় থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশের সাড়ে ৯শ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বনবিভাগ ভুল করে মেহেরপুর সীমানা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪০টি গাছ চিহ্নিত করেছে। তাছাড়া মেহেরপুর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ফোর লেনের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল তার বাজেট বরাদ্দ কম এসেছে। এ কারণে অপাতত সড়ক সম্প্রসারণ হচ্ছে না।